ভোলার শিশুরা জানে না শহীদ দিবস কী
ভোলা: জেলার সাত উপজেলায় ১৪৪৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে কিছু কিছু এলাকায় সচেতন মহলের উদ্যোগে বাঁশ ও কলা গাছের অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করা হয়। তবে এভাবে দিবসটি পালন করা হলেও এসব অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানে না শহীদ দিবস কী? এতে করে ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোলার সাত উপজেলায় মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে কলেজ রয়েছে ৪০টি, মাধ্যমিক ও নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬২টি, মাদরাসা মোট ২৪৪টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মোট ৯৯৫টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভোলা সদরে শহীদ মিনার রয়েছে ১৭টি, দৌলতখানে ১১টি, বোরহানউদ্দিনে ১৩টি, তজুমদ্দিনে ৮টি, লালমোহনে১৫টি, চরফ্যাশনে ২১টি ও মনপুরা উপজেলায় ৭টিসহ ছোট বড় মোট ৯২টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ১৪৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আবার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও জানে না ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস কী?
চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন ঢাল চরের বাসিন্দা বৃদ্ধ কাঞ্চন মিয়া তার ভাষায় বলেন, ‘সংরামের বছর বাংলাদেশে যুদ্ধোর কতা হুনছি, হেই সোময় যুদ্ধে ম্যালা মানুষ মরচে হেডাও হুনচি।’ তবে কী জন্য যুদ্ধ হল, ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস সর্ম্পকে কিছুই জানেন না তিনি। একই চরের কিশোর আবু আলম ছিদ্দিকুল্লাহ বাংলাদেশে কখন, কী কারণে যুদ্ধ হয়েছিল সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না। শুধুমাত্র আবু আলম, ছিদ্দিকুল্লাহই নয় তাদের মতো এ অঞ্চলের অনেক শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক ও বৃদ্ধ রয়েছে যারা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ দিবস সম্পর্কে কিছুই জানে না।
ঢালচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, এ অঞ্চলের মানুষ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সচেতনের ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে তাদের পাঠদানের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলন, শহীদ দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে না।
চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির রাজন জানান, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি এলে কিছু কিছু এলাকায় সচেতন মহলের উদ্যোগে চাঁদা উঠিয়ে বাঁশ ও কলা গাছের শহীদ মিনার অথবা কাঠ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শিশু ও তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা দিবসটি পালন করে থাকেন। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুজ্জামান জানান, যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলা হয়েছে নিজেদের উদ্যোগে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি যেন পালন করে। আর যাদের নির্মাণের সামর্থ নেই তারা যেন আশপাশে যেখানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে যায়।
ভোলা জেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রাণ গোপাল দে বলেন, ‘জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। গত দুই বছর আগে শহীদ মিনার নির্মাণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে লিস্ট চেয়ে ছিল। আমরা তা পাঠিয়েও ছিলাম। আমার জানা মতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোনো ফান্ড না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানে তা নির্মাণ করা হচ্ছেনা।
সচেতন মহল মনে করছেন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, শহীদ দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে। তা না হলে দেশের প্রতি তাদের প্রেম সৃষ্টি হবে না। এজন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মুখে শহীদ মিনার নির্মাণ করা দরকার বলে মনে করছেন তারা।