দু’বার ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া ছেলেটিকে পিটিয়ে মারলো মানুষ
কাপাসিয়া (গাজীপুর) : কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের খিরাটি উত্তরপাড়া গ্রামের স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান জাহিদুল ইসলাম সজিব। খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজ থেকে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতিও নিচ্ছিল জাহিদ। কিন্তু মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয়ায় পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয়নি তার। আর সেই অসুস্থ ছেলেটিকেই পিটিয়ে মারা হল ডাকাত সন্দেহে!
পৈশাচিক এ ঘটনা গত ১১ জুন রাতের। উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে। গ্রামবাসীর উন্মত্ত ও হিংস্রতার সঙ্গে পুলিশের আচরণে ক্ষুব্দ নিহত তরুণ জাহিদুলের সহপাঠী ও শিক্ষকসহ এলাকার হাজারো মানুষ।
অসুস্থ এ ছেলেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পর মরদেহ পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। মর্মান্তিক এ ঘটনা জানার পর পরদিন স্বজনরা থানায় গিয়ে মরদেহ দেখার অনুমতি চায়। পুলিশ সে অনুমতি না দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ডাকাত হিসেবে জাহিদুলের মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
এখানেই শেষ নয়, অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনাসহ ডাকাতির চেষ্টা করায় পৃথক দুই মামলাও নেয় পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মারা ছেলেটি মানসিক প্রতিবন্ধী বলে ঘটনার রাতেই জেনেছিল পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরও প্রয়াত এ তরুণকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলেই মামলা নেয় পুলিশ।
খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আওলাদ হোসেন জানান, সজিব ছিল খুবই মেধাবী ছাত্র। কিন্তু নির্বাচনী পরীক্ষার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় ফরম পূরণ করা হয়নি তার।
শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে মেধাবী জাহিদুল ইসলাম সজিব ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে। ২০১৪ সালে ঘাগটিয়াচালা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে এসএসসি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয় পাশের খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষায়ও অংশ নেয় জাহিদ। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে এসে মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয় এ তরুণের।
আড়াই মাস আগে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এদিক-সেদিক উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করতো জাহিদ। গ্রামের কিংবা পাশের গ্রামের লোকজনও এ তরুণের অসুস্থতার কথা জানতো। তারা বলত, ছেলেটি পাগল। বাড়ি না গিয়ে অনেক সময় রাস্তায় লোকজনের কাছে খাবার চেয়ে নিত। কেউ কিছু দিলে তা খেয়েই সন্তুষ্ট থাকত সে।
ঘটনার দু’দিন আগে রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় জাহিদ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওইদিন বাড়ি প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরছিল জাহিদুল ইসলাম সজিব। ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে রাত প্রায় ৯টার দিকে গ্রামের এক বাড়ির উঠানে ঢুকে পড়ে। ওই সময় ঘর থেকে তাকে দেখে চিৎকার করে ওঠে বাড়ির এক কিশোরী। বাড়ির লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে তাকে দেখে ডাকাত-ডাকাত বলে চিৎকার করলে ভয়ে জড়োসড়ো ছেলেটি পাশের গোয়ালঘরে ঢুকে পড়ে।
এ সময় বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে ওই গোয়ালঘরের ভেতর ছেলেটিকে নির্মমভাবে পেটায় বাড়ির লোকজন। ডাকাত হানা দিয়েছে ভেবে ততক্ষণে বাড়ির সামনে লাঠিসোটা হাতে জড়ো হন ১০০ থেকে ১৫০ জন গ্রামবাসী। পরে হাত-পা বেঁধে ছেলেটিকে গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেয়া হয়। তারা অবোধ ওই ছেলেটাকে প্রথমে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে দুপায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে গাছের সঙ্গে ঝুলায়। গাছে ঝুলিয়ে সহযোগী ডাকাতদের পরিচয় জানতে চেয়ে বেদড়ক পিটুনি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। নিষ্ঠুরতার জবাবে ছেলেটি দু-তিনবার অস্পষ্ট জবাবে শুধু বলেছিল ‘খিদা লাগছে।’
ছেলেটির সহজ, সরল কথায় গ্রামবাসী আরও হিংস্র হয়ে উঠে। পরে তারা মাটিতে ফেলে শাবল দিয়ে একটি চোখ উপড়ে তা নিয়ে উল্লাস করেন। তারপর মাথা থেঁতলে দেন ছেলেটির। খবর পেয়ে টহল পুলিশ সেখানে পৌঁছে ছেলেটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জাহিদুল ইসলাম সজিব কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের খিরাটি উত্তরপাড়ার প্রয়াত জাকির হোসেন মুকুলের ছেলে জাহিদ। বাবা মারা যান ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের অফিস সহকারী ছিলেন তিনি। মা রেবেকা সুলতানা রেবা একজন গৃহিনী। এ দম্পতির ৩ সন্তানের মধ্যে জাহিদুল সবার বড়। অন্য দুই সন্তান মেয়ে।
সজিবের চাচা দুবাইপ্রবাসী আনোয়ার হোসেন জানান, একমাত্র ভাতিজার মানসিক অসুস্থতা দেখে তিনি আর বিদেশে যাননি। অনেক চেষ্টা করেও তারা সজিবকে চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেননি। কবিরাজ ডেকে এনে বাড়িতে সজিবের চিকিৎসা করিয়েছেন। সুফল না পাওয়ায় সজিবকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।
সজিবের মা রেবেকা সুলতানা রেবা জানান, প্রায় দুমাস আগে ওই ঘর থেকে সজিব একবার বেরিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাশের আড়ালবাজার থেকে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর থেকে সজিব নিজেই ঘরের ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখত। খাবার সময় হলেই সে নিজেই খুলে দিত তালা। সজিব কারো সঙ্গে কথাও বলত না। তার থাকার ঘরে কেউ যেতে চাইলে খেপে যেত সে। অনেক খিদে পেলে খাবার চেয়ে খেত। তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে চাইলেও সজিব রাজি হত না।
সজিবের দাদি শুক্কুরি বেগম আরো জানান, সজিব খুবই খেতে চাইতো। খাবার নিয়ে গেলে খুবই খুশি হত। হাতে খাবার দেখলে ছুটে আসতো। রাতে তার ঘরে একাই থাকতো সজিব। গত ৯ জুন রাতে বারান্দার গ্রিল ভেঙে বেরিয়ে যায়। পরদিন সকাল থেকে চারদিকে তাকে খোঁজা হচ্ছিল।
সজিবের নানা আরজু মিয়া জানান, গত ১২ জুন তিনিসহ তার মেয়ে রেবেকা সুলতানা রেবা, প্রতিবেশী আলমগীর হোসেনসহ তারা সজিবের নিখোঁজের ঘটনায় কাপাসিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান। সাধারণ ডায়েরি করার পর থানায় এক কনস্টেবলের মোবাইল ফোনে গণপিটুনিতে নিহত অজ্ঞাত পরিচয় ডাকাতের মরদেহের ছবি দেখে সজিব বলে চিৎকার দিয়ে সংজ্ঞা হারান রেবেকা সুলতানা রেবা।
ওই রাতে যা ঘটেছিল
পাশের বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের একটি বেসরকারি বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে নয়ানগর জামে মসজিদে তিনি তারাবি নামাজ পড়তে যান। ওই সময় বাড়িতে ছিলেন তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন, ছেলে শরীফ হোসেন, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী হনুফা বেগম, ভাতিজা ইসমাইল হোসেন এবং নাতনি সাবিনা ইয়াসমীন।
মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘মসজিদে থেকে বাড়িতে ডাকাত হানা দেয়ার খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখি প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন গ্রামবাসী এক ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দিচ্ছেন।’
খবর পেয়ে কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেন্টুচন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে টহল পুলিশ রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পৌঁছান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা
পুলিশ সেখানে গিয়ে সজিবকে নিস্তেজ অবস্থায় দেখেন। কিন্তু পুলিশের সামনেই কেউ কেউ নিস্তেজ সজিবের শরীরে লাঠি কিংবা শাবল দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করছিলেন। একপর্যায়ে এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ এগিয়ে গিয়ে সবাইকে নিরস্ত করেন। ওই সময় এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ সজিবকে নাড়াচাড়া করে বেঁচে আছেন দেখে তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম প্রধানকে।
ইউপি সদস্য সেলিম প্রধান বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা পর ইঞ্জিনচালিত একটি রিকশাভ্যান (টমটম) ব্যবস্থা করে দিলে পুলিশ তাতে তুলে সজিবকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। ওই সময় ওই বীমা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনের বাড়ির ভেতর গিয়ে তার সঙ্গে একান্তে দীর্ঘ সময় কথা বলেন এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ।
তবে এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ দাবি করেন, আমি ওই রাতে তরগাঁও, বারিষাব ও কড়িহাতা ইউনিয়ন এলাকায় টহল দায়িত্বে ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, সাইদুল ইসলাম, আয়নাল হোসেন, বিশেষ আনসার সদস্য দীপঙ্কর। থানার ডিউটি অফিসার মুঠোফোনে আমাকে রাত সাড়ে ১০টায় ডাকাত হানা দেয়াসহ এক ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেয়ার খবর জানালে আমি ওই এলাকায় যাই।
পুলিশের উপস্থিতিতে মারধর করা হয়নি দাবি করে এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘আমি গিয়ে ডাকাত সন্দেহে পিটুনিতে রক্তাক্ত সজিবকে নিস্তেজ অবস্থায় দেখতে পাই।’
তবে বাড়ির ভেতর মিনহাজ উদ্দিনের সঙ্গে একান্তে দীর্ঘসময় কথা বলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার তথ্য জানতে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম।’
নয়ানগর গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য সেলিম প্রধান বলেন, ‘গ্রামে কোনো ডাকাত আতঙ্কও ছিল না।’
একদফা গণপিটুনি দিয়ে দুপায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে আটক তরুণের কাছে তার ডাকাত সহযোগীদের নাম জানতে চাওয়া হয়। ওই সময় দু-তিনবার শুধু ওই তরুণ খিদে লাগছে বলে শব্দ উচ্চারণ করে। স্বীকারোক্তি না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাটিতে ফেলে ফের নির্যাতন চালায় গ্রামবাসী। একপর্যায়ে শাবল দিয়ে তার ডান চোখ উপড়ে ফেলা হয়। এরপর থেঁতলে দেয়া হয় মাথা।
প্রত্যক্ষদর্শী মুদি দোকানদার আবুল বাশার বলেন, ‘প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় ধরে অবর্ণনীয় নির্যাতন চললেও আটক ওই তরুণ কথা বলেনি। এমনকি নড়াচড়াও করতে দেখিনি।’
ওই গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল বাতেন বলেন, ‘আটক হওয়ার সময় ওই তরুণের হাতে কালো পলিথিনে মোড়া দু’মুঠো মুড়ি ও ছোলা ছিল।’
একদিন আগে খাবার চেয়ে খেয়েছিল ছেলেটি
পাশের বারিষাব বাজারের অনেক ব্যবসায়ী শনিবার (১১ জুন) বিকেলে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন। একা একাই কথা বলছিল ছেলেটি।
বাজারে সড়কের পাশে ছোলামুড়ি বিক্রেতা তানবীর হোসেন জানান, বিকেলে তার কাছে গিয়ে খিদে লাগছে বলে পেট দেখাচ্ছিল ছেলেটি। পরে তিনি দু’মুঠো মুড়ি ও ছোলা দেন।
জাহিদের বাড়িতে এখন শুধু আহাজারি
কাপাসিয়া সদর থেকে খিরাটিবাজারের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। খিরাটিবাজার থেকে উত্তর দিকে সিংগুয়া সড়কে এক কিলোমিটার দূরে খিরাটি উত্তরপাড়া গ্রাম। বাঁ পাশে ওই সড়ক থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে সজিবের বাড়ি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, একমাত্র ছেলের মর্মান্তিক এ ঘটনায় পাগলপ্রায় সজিবের মা রেবেকা সুলতানা রেবা। বাড়ির উঠানে কপাল চাপড়ে বিলাপ করছিলেন সজিবের দাদি শুক্কুরি বেগম। থেমে থেমে চিৎকার দিয়ে ওঠছিল সজিবের ছোট বোন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রুবাইয়া জাহান শশী। ছয় বছর বয়সী আরেক বোন ইসরাত জাহান নিশি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল ওই ঘরটির দিকে, যে ঘরে থাকত তার বড় ভাই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সজিবের মা রেবেকা সুলতানা রেবা বলেন, ‘আমার ছেলে পাগল ছিল এটা গ্রামের সবাই জানত। এত মেধাবী একটা ছেলে পাগল হয়ে যাওয়ায় গ্রামের মানুষজন কতই আফসোস করেছে। তার সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন, মানত করেছেন। আর এই ছেলেটাকেই ডাকাত বলে কী অবর্ণনীয় নির্যাতন করে মারা হল।’
রেবেকা সুলতানা রেবা দাবি করেন, ‘মানুষ কত বর্বর হলে নিরীহ একটি ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে মারতে পারে। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তারা যতজনই হোক, আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
সজিবের মানসিক সমস্যার কথা জানত গ্রামের সবাই : গ্রামের সবাই জানত সজিবের মানসিক ভারসাম্য হারানোর বিষয়টি। পাশের এমএ মজিদ বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক প্রতিবেশী শাহজাহান বলেন, ‘খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল সজিব। প্রায় আড়াই মাস ধরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হত।’
ঘাগটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য কফিল উদ্দিন বলেন, ‘মেধাবী এ ছাত্রের হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার ঘটনা গ্রামের সবারই জানা। অনেকে ওই ছেলেটার জন্য দোয়া করেছেন।’
পুলিশের বক্তব্য
সজিবসহ ৭ থেকে ৮ জন সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘গণপিটুনিতে নিহত ওই ডাকাত ছাড়া অন্য কোনো ডাকাতকে কেউ দেখেনি। নিহতের সঙ্গে আরো কেউ ছিল কি না তারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘গণপিটুনিতে নিহত ডাকাতের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে লোকমুখে শুনছি, ছেলেটি নাকি পাগল ছিল। বিষয়টি বুঝতে পারছি না।’
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘নিহত ডাকাতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
গাজীপুরের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’