সাভারে ব্যবসায়ীদের ‘জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবির’ অভিযোগে পুলিশের একজন সদস্যসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাজানো বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সাভার থানার ওসি মোস্তফা কামাল।
তবে গ্রেপ্তারদের ডলার পাচারকারী দলের সদস্য দাবি করে র্যাব বলছে, ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। অন্য কোনো সংস্থাকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করা হলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
এদিকে গ্রেপ্তার ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় অস্ত্র আইনে ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দুটি মামলা করে র্যাব রোববার তাদের থানায় সোর্পদ করে।
পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের দুই দিন রিমান্ডে নেয়া হয়।
শুক্রবার মধ্যরাতে ‘অপহরণকারী’ ধরতে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় র্যাবের ওই অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে সাভার থানা পুলিশের এক সদস্য, একজন সাবেক সেনাসদস্য ও পুলিশের এক সোর্স রয়েছেন। আর সবুর নামে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয় শনিবার দুপুরে।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- সাভার মডেল থানার সহকারী উপ পরিদর্শক ফাজিকুল ইসলাম, প্রায় এক বছর আগে অবসরে যাওয়া সেনা সদস্য রেজাউল হক, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর মাস তিনেক আগে জামিন পাওয়া সুজন, পুলিশের সোর্স মিরান খান ও সামসুল হক।
গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ১৩টি গুলি, সাবেক সেনা সদস্যের কাছে একটি পিস্তল ও চারটি গুলি এবং অন্যদের কাছে তিনটি চাপাতি ও দুটি হাতকড়া পাওয়া গেছে বলে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান জানান।
অভিযানের সময় ধস্তাধস্তিতে র্যাব কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন নাহিদ আহত হন।
যদিও ক্যাপ্টেন নাহিদের আহত হওয়ার ঘটনাটি নিছক সড়ক দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ সদস্য ফাজিকুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, নাহিদের অবস্থা এখনো গুরুতর।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় কথা বলার সুযোগ এখনো হয়নি। কথা বললেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।
তবে তিনি বলেন, “ফাজিকুল সত্য কথা বলছে না।”
সাভার থানার ওসি মোস্তফা কামাল রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবার রাতে র্যাবের অভিযানটি সাজানো বলে মনে হচ্ছে। তবে তদন্ত করলেই পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসবে।”
“যেসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে ফাজিকুলের অস্ত্রটি বৈধ,” বলেন তিনি।
তদন্তের প্রয়োজনে আহত র্যাব কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন নাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।
থানায় র্যাবের দায়ের করা মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপরাধমূলক কাজ করার সময় তাদের গ্রেপ্তাররের কথা বলা হয়েছে।
সাভার থানায় ওসির অনুমতি নিয়ে সাভার প্রতিনিধি কথা বলেন এএসআই ফাজিকুলের সঙ্গে।
ফাজিকুল জানান, গ্রেপ্তার রেজাউল পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। সে জানায় একটি ডলারের হুন্ডি সাতক্ষীরা থেকে আসছে। এই কথা উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুরকে জানানো হয়। কিন্তু তিনি তাদের গ্রেপ্তারে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। পরে সোর্স রেজাউলকে নিয়ে ওই অভিযান চালানো হয়।
“আমি একটু দূরে ছিলাম। রেজাউল ডলার বহনকারীকে ধরলে সাদা পোশাকের লোকজন তাদের আটকে ফেলে এবং মারধর করে। আমি এগিয়ে গিয়ে পুলিশের পরিচয় দিয়ে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে আমাদের গ্রেপ্তার করে।”
তিনি দাবি করেন, ডলার বহনকারীর কাছ থেকে ডলারের ব্যাগটি অভিযানে অংশ নেয়া ক্যাপ্টেন নাহিদ নিয়ে নেন। পরে তিনি জানতে পারেন, ওই ব্যাগে ১৭ লাখ টাকার ডলার ছিল।
যদিও থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, জব্দ তালিকায় ডলার নেই।
উপপরিদর্শক ফাজিকুল বলেন, “আমাদের আটক করে র্যাবের গাড়িতে করে ঢাকায় নেয়ার সময় ক্যাপ্টেন নাহিদ মোটরসাইকেলে পিছু পিছু আসছিলেন।”
“এসময় তার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ে বলে আমাদের গাড়িতে থাকা র্যাব কর্মকর্তা মোবাইলে জানতে পারেন। পরে আমাদের বহনকারী গাড়ি সেখানে যায় এবং ক্যাপ্টেন নাহিদকে উদ্ধার করে এনাম মেডিকেলে নিয়ে যায়,” বলেন তিনি।
গ্রেপ্তার সামসুল হক দাবি করেন, র্যাব তার কাছে থাকা ডলারগুলো হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, যারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে ডলারের ব্যাগটি তাদের কাছে ছিল। পলাতক খোকনকে গ্রেপ্তার করা গেলেই সব জানা যাবে।
“যা ঘটেছে তাই বলা হয়েছে। আর গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে র্যাবের কাছে ঘটনার সঙ্গে তাদের জাড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।”