নৌ চলাচল বিঘ্নিত, পণ্য সঙ্কটে দেশের ১৬ জেলা
ঢাকা : পাটুরিয়া-বাঘাবাড়ী ৪৫ কিলোমিটার নৌ-পথে সর্বোচ্চ পানির গভীরতার (ড্রাফ) সীমানা ৭ ফুট বেঁধে দিয়েছে সরকার। নৌ-পথ সচল রাখা ও দেশের ১৬টি জেলার খাদ্যদ্রব্য, পেট্টোলিয়াম, সার ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী জাহাজে চলাচলের সুবিধার্থে সরকার এ উদ্যোগ নেয়।
এদিকে, জাহাজের পাইলটরা য্নে নির্ধারিত ড্রাফসীমা লঙ্ঘন করতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) একটি নৌ-বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ৭ ফুট ড্রাফটের বাইরে ৯ থেকে ১০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করলে ডুবোচরে আটকে যাবে। তখন অন্যসব নৌ-যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এ ধরনের বিশেষ সর্তকতা প্রচার করার পরও একশ্রেণির জাহাজ মাস্টার ১১ থেকে ১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চালাচ্ছেন। ফলে গত ৫ দিনে সিরাজগঞ্জ বাঘাবাড়ি নৌ-চ্যানেলে ৫০টি পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়েছে।
বাঘাবাড়ি বন্দর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বড়াল নদীর বিভিন্ন চ্যানেলে এসব পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়ায় চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে ইরি-বোরো চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা আছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
তবে কোনো অবস্থাতেই সার, তেলসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী কোনো কার্গো জাহাজ যাতে নদীপথে ডুবোচরে আটকে না যায় সে ব্যাপারে নেয়া হয়েছে কঠোর নজরদারি। বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং ইউনিটসহ নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পথ সচল রাখতে ডুবোচরগুলো ড্রেজিং করে নাব্যতা বৃদ্ধির সমন্বয়ে গঠিত ভিজিল্যান্ট টিম ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে কাজীরহাট এলাকায় ড্রেজিং শুরু হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র একটি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গমাতা ড্রের্জাস’র একটি ড্রেজার নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
ইতোমধ্যে পাবনা জেলার লতিফপুর ও মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার কাজিরহাট এলাকায় ড্রেজিং করা হয়েছে ৯৯ হাজার (১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ঘনমিটার। এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ১৫ হাজার ঘনমিটার ড্রেজিং কাজ করেছে। নাখালিয়া চর, মোহনগঞ্জ চর সার্ভে করা হয়েছে। পরে ড্রেজিং পরিচালনা করা হবে বলে বিআইডব্লিউটিএ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল আলম মাসুদ জানান।
বিআইডব্লিউটিএ নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারিকুল হাসান বাংলামেইলকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে সার পরিবহন যাতে নির্বিঘ্ন রাখা যায় সে ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সার পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নদীপথকে ঝুঁকিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে উত্তরাঞ্চলের জন্য সারবোঝাই কার্গো আটকে যাচ্ছে। পাটুরিয়া থেকে বাঘাবাড়ী প্রকৃতির নৌ-চ্যানেলে বিআইডব্লিউটিএ নদীপথের গ্যারান্টি দিচ্ছে ৭ ফুটের গভীরতা। কিন্তু সারবোঝাই অধিকাংশ কার্গো জাহাজে রয়েছে ১২ ফুটের বেশি গভীরতা। যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যানেলে ডুবোচরে ওইসব কার্গো আটকে যাচ্ছে।
এদিকে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার পাটুরিয়া থেকে রাসায়নিক সার, ক্লিংকার ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক পণ্য নিয়ে বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো ও নৌ-বন্দরে আসছে।
উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো ও নৌ-বন্দর থেকে যোগান দেয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন ২৭ লাখ লিটার জ্বালানি তেল ও হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাংলামেইলকে জানান, ‘প্রতি বছরই এ সময়ে দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌ-পথে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে।’
তিনি আরো জানান, ‘বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে ৭ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু জাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে।’
বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল কোম্পানির ডিপোতে সাড়ে চার কোটি লিটার ডিজেল মজুদ আছে। আরো প্রায় এক কোটি লিটার ডিজেল ভর্তি ১৯টি জাহাজ বন্দরের বড়াল ও হুড়াসাগর নদের বিভিন্ন পয়েন্টে আনলোডের অপেক্ষায় নোঙর করে আছে। নাব্যতা সংকটে জাহাজগুলো অর্ধেক লোড অবস্থায় বাঘাবাড়ী ডিপোতে আসছে।