এফডিসি হারিয়েছে তার প্রিয় সখা
ঢাকা: সোমবারের সকাল যেন এফডিসির চিরচেনা সকাল নয়। থমথমে মেঘলা আকাশ। এফডিসি হারিয়েছে তার প্রিয় সখা। চিত্রনায়িকা দিতি, কয়েকযুগ ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের নিয়মিত মুখ, প্রিয় মুখ দিতি আর নেই। ক্যনসারে আক্রান্ত হয়ে একবছরের মাথায় হুট করে চলে গেলেন তিনি। এ যেন মানতেই পারছেন না শেষ বিদায় জানাতে আসা দিতির সহকর্মী স্বজনরা।পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘দিতির অসুস্থতার শুরু থেকেই আমি তার পরিবারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। তখন দেখেছি, কী কষ্ট তিনি করছেন। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন। তার চলে যাওয়া আমাদের অপরাধী করে দেয়। কারণ তিনি নিজের শরীরের মধ্যে ক্যানসার বয়ে বেড়ালেও, আমরা কেউ তা জানতে পারিনি।’
অভিনেতা আলমগীর বলেন, ‘দিতি আমার চেয়ে প্রায় ১৫ বছরের বড়। তারপরও ১৯৮৮ সালে সুভাষ দত্তের ‘স্বামী-স্ত্রী’ ছবিতে তার সঙ্গে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলাম। এরপর আরও কয়েকটি ছবিতে আমাদের এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সে সংখ্যাটা খুব বেশি নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এক সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দিতিকে যতটুকু দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে তিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল এক নারী। যার মধ্যে তারকা সুলভ কোন আচরণই ছিলো না। তিনি বরাবরই মানুষকে ভালোবেসেছেন, ফলে মানুষ তাকে প্রাণ থেকে ভালোবাসা দিয়েছে।’
চিত্রনায়ক রুবেল বলেন, ‘তার (দিতি) এভাবে চলে যাওয়া মানায় না। তারপরও মেনে নিতে হচ্ছে, তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। তবে তার স্মৃতিগুলো ঠিকই থাকবে। এগুলোই নতুনদের পথ দেখাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দিতি এদেশের চলচ্চিত্রকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমরা তাকে সে তুলনায় কিছুই দিতে পারিনি। তার এই অকাল প্রয়াণ আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়ে গেছে।’
অভিনেত্রী চম্পা বলেন, ‘দিতির আমার বোনের মতোই ছিলো। এক সঙ্গে অনেকটা পথ চলেছি আমরা। তাই এত দ্রুত দিতির চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গন একজন ভালো মানুষকে হারিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘শুটিংয়ে দিতি সবার সঙ্গে যেমন মিষ্টি সুরে কথা বলতেন, ঠিক তেমনই ব্যক্তিগত জীবনেও হাসি খুশি মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কখনও কারো সঙ্গে রাগ করে কথা বলেছেন বলে আমার জানা নেই। তাছাড়া তিনি ধার্মিকও ছিলেন।’
অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা বলেন, ‘দিতির মতো এমন চমৎকার একটি মেয়ে মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। ওর জন্য খুব কষ্ট হতো। গতকাল যখন শুনলাম দিতি আর নেই তখন কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।’
তিনি আরো বলেন, ‘মায়ের আগে মেয়ের চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া কষ্টের। এখন দিতির আত্মার জন্য শান্তি কামনা ছাড়া কিছুই করার নেই। আল্লাহ ওর সন্তানদের এ শোক সহ্য করার শক্তি দান করুকে।’
অভিনেতা আহমেদ শরীফ বলেন, ‘অভিনেত্রী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও দিতি ছিলেন অসাধারণ। তার মৃত্যু চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য বেদনা দায়ক। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। পাশাপাশি তার সন্তানরা যেন তার মতোই ভালো মানুষ হয় সেই দোয়া করছি।’
ওমর সানি বলেন, ‘এটা খুবই বেদনার, দিতিকে বিদায় জানাতে আসা। দুনিয়ার সব ফুল দিয়েও তাকে শুভেচ্ছা জানানোর শেষ হবে না। সে আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবে নন্দিত অভিনেত্রী হয়ে।’
অভিনেত্রী বাঁধন বলেন, ‘দিতি আপার সঙ্গে বেশ কয়েকটি নাটকে আমি অভিনয় করেছি। এখনও একটি ধারাবাহিক নাটক অনএয়ারে রয়েছে। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। ফলে তার মৃত্যুটা আমার জন্য বেশ কষ্টের।’