ঘনাচ্ছে ভোটের সময়, বাড়ছে সহিংসতা নিয়ে শঙ্কা

nirbachon

ঢাকা : রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। তবে ভোটের আগের সারাদেশের সহিংস পরিস্থিতি দেখে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে সাধারণ ভোটাররা। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত উপজেলা, জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন ও পৌর ভোটের মতোই সহিংস ও কারচুপির ঘটনা এ নির্বাচনেও ঘটতে পারে বলে মনে করছে সরকার বিরোধী প্রার্থী ও ভোটারা।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসন নৌকা মার্কার প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার কৌশল করছে বলেও দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন দলের বাইরের প্রার্থীরা। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে অনিময় সহিংসতার বহু অভিযোগ দায়ের করলেও এ ব্যাপারে ইসি থেকে কোনো অ্যাকশন নেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে অনেকটাই গা ছাড়া ভাব ছিল নির্বাচন কমিশনের।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ। ভোট উপলক্ষে এদিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে ইউপি নির্বাচনে সরকারি দলকে জেতানোর চেষ্টায় নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।

তিনি বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেভাবে সহিংসতা চলছে তাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসন- ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কাজ করছে। তারা নৌকা মার্কাকে জিতিয়ে দেয়ার আবহ তৈরি করছে।’

বিএনপির পক্ষ থেকেও শুরু থেকে একই অভিযোগ। ইতোমধ্যে এমন একাধিক অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রাথীরা। এছাড়া প্রতিদিনই প্রভাব বিস্তার ও সহিংসতার খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি‘র স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে মাহবুব রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘পিছনের নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালে তো মনে হয় এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাও করা যায় না। সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনে ভোট লুটপাটের ব্যবস্থা সাজিয়ে রেখেছে। তারপরও আমরা নির্বাচনের শেষ দেখতে ভোটে অংশ নিচ্ছি।’

এদিকে নানা দিকে থেকে অনিয়ম ও অভিযোগের তীর আসলেও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে আশাবাদী ইসি। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, ‘আশা করছি আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে। এটি শুধু মুখের কথা নয়, বাস্তবেও যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে শঙ্কায়, এ প্রসঙ্গে শাহনেওয়াজ ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই- আপনারা ভোট দিতে যাবেন। কোনো অসুবিধা হলে আমাদের জানাবেন। শুধু মুখের কথাই নয়, আমরা বাস্তবেও কোনোভাবেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম বরদাশত করবো না। এটা আমাদের অঙ্গীকার। কোথাও কোনো ছাড় দেবো না।’

ইউপি নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এখানে এখন অর্থ এবং পেশি শক্তির প্রদর্শন চলছে। অর্থ ও পেশি শক্তির কাছে ইসি তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না।’

অন্যদিকে নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক সাধারণ ভোটার। রয়েছে সহিংসতারও ভীতিও। কারণ, ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় সহিংতার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিভাগেই সাত জনের প্রাণহানি হয়েছে। নির্বাচনী সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ১০ জন, আহত হয়েছে প্রায় দুই হাজার। এমন গোলযোগ-সহিংসতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় এ নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল রোববার (২০ মার্চ) মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রচারের সময় শেষ হওয়ার আগে বহিরাতগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘ভোটারদের স্বতোঃস্ফূর্ত ও নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোটের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ কিংবা দায়িত্বে অবহেলা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’

উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। সীমানা জটিলতা, ভোটার পূর্ণবিন্যাস জটিলতার কারণে ৭৩২ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে তিন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোট ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩৪ জন সংরক্ষিত পদে। সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৫৪ প্রার্থী। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ হাজার ৫৭৫ প্রার্থী। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৫৫ জন। যার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫ হাজার ৮৪৬ জন প্রার্থী। ইতোমধ্যে সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৭৯ প্রার্থী।

এদিকে শুরু হতে যাওয়া নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত মোট ১৪টি দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৭৩২ জন এবং বিএনপি‘র ৬১৩ জন। মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ভোটার রয়েছে ইউপিগুলোতে। বিপরীতে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭ হাজার ৭৮টি।

মন্তব্য