আহসান উল্লাহর সেই শিক্ষক গ্রেপ্তার
ঢাকা : অবশেষে পুলিশের হাতে পাকড়াও হলেন আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ‘যৌন নিপীড়ক’ শিক্ষক মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌস। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের সহযোগী এ অধ্যাপক।
বুধবার (৪ মে) সকালে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ ইকবাল। তিনি জানিয়েছেন, ভোররাতে নিজ বাসা থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।
কলাবাগান থানায় অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল বাংলামেইলকে বলেছেন, ‘যৌন হয়রানির অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। আজকে তাকে ঢাকা সিএমএম কোর্টে তোলা হবে।’
গত শনিবার যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আকস্মিক আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তৎক্ষণাৎ বৈঠকে বসে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্তৃপক্ষের ঘোষণাকে প্রত্যাখান করে চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
বেশ কয়েক বছর ধরে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করে আসছিলেন নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের দাপটে সব মিলিয়ে যাচ্ছিল। নিপীড়নের শিকার ছাত্রীদের বেদনা অব্যক্তই থেকে যায়। তবে শেষ রক্ষা হল না দাপুটে শিক্ষক মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌসের।
স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার নিয়ে হলি ফ্যামিল রেড ক্রিসেন্ট এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত মাহফুজ। আরেকটি ফ্ল্যাট রাজধানীর পান্থপথ আবাসিক এলাকায়। প্যরাডাইস সুইটসের পাশে শ্বশুরের কাছ থেকে উপহার পাওয়া ওই ফ্ল্যাটে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করে এনে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি করে আসছিলেন।
মাহফুজের ব্ল্যাকমেইল করার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়া বোঝানোর নামে শিক্ষার্থীদের ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেন। দ্বিমত করলে শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া হত। ফলাফল সেমিস্টার ড্রপ আউট।
প্রাথমিক এ প্রস্তাবে শিক্ষার্থী সায় না দিলে অর্থাৎ পান্থপথের ফ্ল্যাটে যেতে অস্বীকৃতি জানালে বশে আনতে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌস। চেষ্টা করতেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ম্যানেজ করতে।
মাহফুজের ব্ল্যাকমেইলের পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ফ্ল্যাটে ডেকে কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে তিনি (শিক্ষক) তার অফিসিয়াল নম্বরে আজেবাজে ম্যাসেজ পাঠিয়ে রাখতেন, যা দিয়ে পরবর্তীতে তাদের ফাঁদে ফেলতেন।
নানা কৌশল অবলম্বন করে মাহফুজুর রশিদ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করতেন পান্থপথের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে। সেখানে নিয়ে যৌন নিপিড়ন এবং শারীরিক নির্যাতন করতেন। এ কৌশলে অসংখ্য ছাত্রীর সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছেন লম্পট ওই শিক্ষক। কথা না শুনলে ভার্সিটিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর চরিত্র নিয়ে কুৎসা রটানোর হুমকিও দিতেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের মোবাইলে নিজের ন্যুড পিক পাঠানো ছিল ওই শিক্ষকের কাছে অতি সহজ একটা ব্যাপার। আজেবাজে টেক্সটিং, যা হরহামেশাই পাঠানো হত।
অবশেষে সব ভয়, লজ্জা ভেঙে সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন ভুক্তভোগীরা। সবাই একসঙ্গে আন্দোলন শুরু করেন। তীব্র আন্দোলনের তোপে মুখ খুলতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের চৌহদ্দিতে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয় মাহফুজকে। অভিযোগ পাঠানো হয় হাইকোর্ট কর্তৃক যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধে গঠিত কমিটিতেও।