চতুর্থধাপে ৭০৩ ইউপিতে ভোটগ্রহণ চলছে

2016_04_23_09_46_35_OSQcNXvrCfoUMdYwtcRHeM47qPh1bG_original

ঢাকা: চতুর্থ ধাপে ৪৭ জেলার ৮৮ উপজেলার ৭০৩ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ হচ্ছে আজ শনিবার। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটের আগে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, হামলা-ভাঙচুর বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোটাদের মধ্যেও বিরাজ করছে নানা শঙ্কা। সরকার দলীয় হুইপ-এমপি ও প্রভাবশালীদের অচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ায় শেষ মুহূর্তে নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিধি লঙ্ঘনের দায়ে সংসদ সদস্যকে শোকজসহ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি।

এদিকে প্রথম তিন ধাপের ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও কারচুপির ঘটনায় ৪র্থ ধাপের ভোট নিয়েও শঙ্কিত বিরোধী মতের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। শেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষের কেন্দ্র দখলের হুমকি-ধমকিসহ নানান অভিযোগ ইসিতে এসেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য ধাপের মতো এ ধাপেও ভোটগ্রহণে আগে থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। প্রতিপক্ষের উপর হামলা, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, প্রচারে বাঁধা দেয়াসহ সহিংস ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে চলছে আচরণ বিধি লংঘনের মচ্ছব। কোথাও কোথাও প্রার্থী ও ভোটারদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করায় শেষ মুহূর্তে ইসিতে জমা হয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।

তবে এত সবকিছুর পরও, নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা করে বলে জানান নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব ফরহাদ আহমেদ খান। ‘সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ জন্য নির্বাচনী এলাকায় মাঠে টহলে রয়েছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও আনসারসহ প্রায় ২ লক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সঙ্গে রয়েছে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেন, ‘উত্তরোত্তর নির্বাচনী পরিবেশ ভালো হচ্ছে। আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের।’

প্রার্থী ও দল ও ভোটার চতুর্থ ধাপের ভোটে মোট ৩ হাজার ২৪৫ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭ হাজার ১৫৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৪ হাজার ১৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৪টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়াম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৩৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য ৯৮ জন ও সাধারণ সদস্য ২৮৭ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে মোট ভোটার ১ কোটি ১০ লাখ।

মাঠে টহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি ভোট কেন্দ্রে লক্ষাধিক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও ২ লাখের মতো আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। একইসঙ্গে নির্বাচনী অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে নেমেছে। ইসি সচিবালয়ের উপসচিব সামসুল আলম জানান, ভোটের দুই দিন আগে থেকে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবারের নির্বোচনে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে।

মিছিল-সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
নির্বাচনী আইনানুযায়ী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোট গ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে উক্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহবান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করতে এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা সংঘটিত করতে বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না। এই বিধি লঙ্ঘন করলে অন্যূন ৬ মাস বা অনধিক ৩ বছরের কারা দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
ভোটের মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে ইসি। ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবিটেক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো প্রভৃতি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী তিনদিন থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এছাড়া ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌ-যান ও স্পিটবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭১২ ইউপি, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ ৭৩৯ ইউপিতে ও ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে ৬১৪ ইউপিতে ভোট হয়েছে। আজ চতুর্থ ধাপে ৭০৩ ইউপিতে ভোট হচ্ছে। পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্তব্য