হাইকোর্টের বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন!

2016_05_05_15_02_19_Yek7pTcehYkA77XdMBub1DX8OiSEBA_original

ঢাকা : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সাংসদদের হাতে ফিরে যাবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতিদের  কাছে ‘বিলিয়ন ডলার’ প্রশ্ন হচ্ছে, সংশোধনীর বিষয়ে জনগণের ধারণা কী?

রায় ঘোষণাকালীন পর্যবেক্ষণে বিচারপতিরা নিজেরাই তাদের এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বিচারপতিরা বলেছেন, ‘এতে যদি জনগণ মনে করে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে, তাহলে বিচার বিভাগ টিকতে পারে না। ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হলো’ বলে মন্তব্য করেন তারা।

বৃহস্পতিবার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের এ রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। বিচারপতিরা রায় ঘোষণার আগে আদালতের সামনে তাদের এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

আদালত আরও বলেছেন, ‘সংসদ কর্তৃক বিচারকদের অপসারণের বিধান ইতিহাসের দুর্ঘটনামাত্র, যদিও পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে তা বিদ্যমান। কমনওয়েলথভুক্ত মেজরিটি দেশে সংসদের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণ করা হয় না। ৬৩ শতাংশ দেশে এ প্রক্রিয়ায় বিচারক অপসারণ করা হয় না’।

আদালত বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে আমাদের দেশের সংসদ সদস্যরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। দল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সে পক্ষেই তাদের ভোট দিতে হয়, এমনকি তারা যদি বিষয়টি সঠিক মনে নাও করেন। এ পরিস্থিতিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বহাল থাকলে বিচারপতিকে সংসদ সদস্যদের করুণাপ্রার্থী হতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর কিছু দেশে সংসদের হাতে বিচারকদের অপসারণের যে ক্ষমতা রয়েছে তার প্রসঙ্গ টেনে আদালত বলেছেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন (শুনানিতে), যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে সংসদের হাতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ওইসব দেশের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আমাদের সংসদ সদস্যদের মেলানো ঠিক হবে না। ওইসব দেশের সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।  ওইসব দেশে আমাদের ৭০ অনুচ্ছেদের মতো কোনো বিধান নেই।

‘বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হচ্ছে, সংশোধনীর বিষয়ে জনগণের ধারণা কি? এতে যদি জনগণ মনে করে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে, তাহলে বিচার বিভাগ টিকতে পারে না। ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠানো ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হল।’

প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

পরে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট একই বছরের ৯ নভেম্বরে এ বিষয়ে রুল জারি করেন। রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

এই রুলের উপর গত বছর ২১ মে শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালত মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ পাঁচ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন।

এসব আইনজীবীদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি এই শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

দীর্ঘ ১৭ দিন শুনানির পর গত ১০ মার্চ আদালত এ বিষয়ে রায়ের দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানিতে অংশ নেন।

পরে বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করার বিষয়ে  সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় দেন আদালত।

মন্তব্য