বাসচালকের ছেলে থেকে লন্ডনের মেয়র
ঢাকা: লন্ডনের সিটি নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন ৪৫ বছরের সাদিক খান। তিনি প্রথম মুসলিম ও এশিয়ান হিসেবে লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু লন্ডন নয়, তিনি কিন্তু গোটা ইউরোপেরও প্রথম মুসলিম মেয়র।
একজন বাসচালকের ছেলে থেকে লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হওয়াটা কোনো অঘটন নয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি ও মানবতাবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ছিমছাম মানুষটির উদার নীতি, স্বচ্ছ ব্যক্তিত্ব এবং কর্মস্পৃহা তাকে রাজনীতিতে সফল হতে সহায়তা করেছে।
তার বাবা পাকিস্তানে বাসচালক হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি লন্ডনে চলে আসেন। সেখানেই ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন সাদিক খান। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। একটি অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে ছোটবেলায় খুব কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। পড়াশোনার খরচ জোগাতে নানা ধরনের কাজও করেছেন। এমনকি স্কুলের ছুটিতে নির্মাণ শ্রমিকের মত কঠিন কাজও করেছেন। কেননা তাদের সংসারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তারওপর তার বাবা-মাকে দেশে স্বজনদের টাকা পাঠাতে হত। এভাবেই তিনি স্কুলের লেখাপড়া শেষ করেন।
১৯৯৩ সালে নর্থ লন্ডনের এক ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করার পর কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতও করেছেন। পরে ১৯৯৪ সালে তিনি মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এসময়ই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। যোগ দেন লেবার দলে। ১৯৯৪ সালে তিনি লেবার পার্টি থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং ২০০৬ পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে লেবার দলের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং ২০১০ সাল অব্দি এ দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি এডওয়ার্ড মিলিব্রান্ডের ছায়া মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। সেখানে তিনি বিচারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালে তিনি লন্ডনের ছায়া মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন এবং মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৯৪ সালে আইনজীবী সাদিয়া আহমেদকে বিয়ে করেন। তাদের আনিসা ও আম্মারাহ নামে দুটি মেয়ে রয়েছে। তিনি খেলাধূলা বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খুব পছন্দ করেন এবং লিবারপুল ফুটবল ক্লাবের সমর্থক।
লন্ডনের নির্বাচনী প্রচারণায় কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী গোল্ডস্মিথ তাকে ‘চরমপন্থি মুসলিম’ হিসেবে চিহ্ণিত করার চেষ্ট করলেও তিনি কিন্তু একসময় কট্টরপন্থি মুসলিমদের হামলার শিকার হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে পার্লামেন্ট সদস্য থাকাকালে সমকামী বিয়ের ওপর আনীত এক বিলে ভোট দেয়ায় ব্রাডফোর্ড মসজিদের এক ইমাম তাকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করে ফতোয়া দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল।
লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সাদিক খান শহরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘আমি লন্ডনের প্রতিটি নাগরিককে ধন্যবাদ জানাই। কেননা তারা অসাধ্য সাধন করেছে। লন্ডনের মানুষ ভয়ের উর্ধ্বে ওঠে আমার প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে তাতে আমি গর্বিত।’ বর্তমানে পশ্চিমা দুনিয়ায় মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যেখানে ‘সন্ত্রাসী ও বিপজ্জনক শরণার্থী’ হিসেবে সবার উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে প্যারিস ও ব্রাসেলস হামলার পর, সেখানে সাদিক খানের এই বিজয় আশাব্যঞ্জক। তিনি এখন ইউরোপের বিশেষ করে ব্রিটিশ জনগণের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কতটা সম্মানজনক আইডেনটিটি অর্জন করতে পারেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।