সুনামগঞ্জে আ.লীগের বিদ্রোহীরা অনড়
সুনামগঞ্জ : ৪ জুন অনুষ্ঠেয় ৬ষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের রাজনীতি সরগরম হলেও সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করার ব্যাপারে অনড় রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা ও তৃণমূল নেতাদের হুঁশিয়ারি, বহিষ্কারের খড়গ কিছুই পরোয়া করছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
কেন্দ্রীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র হিসেবে দলের বিপরীতে থেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে জোর প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। গত ১৯ মে ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন অনেকেই তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করার প্রচার দিয়ে যারা নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তারাই থেকে গেছেন দলের বিদ্রোহী হয়ে। আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধেই নির্বাচনের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার লক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা। এদের অনেকেই আবার দলের বিভিন্ন পদে বহাল রয়েছেন।
ফতেপুর ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থীরা আলাপকালে জানান, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়ার কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু যে যাই বলুক, যত বাধাই আসুক, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে থাকবেন।
এদিকে, বিদ্রোহীদের এমন অনড় মনোভাবে অস্বস্তিতে পড়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা। একই সঙ্গে বিদ্রোহী ইস্যুতে বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ফতেপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের ৪ বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহী এসব প্রার্থীরা হলেন-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রবীন সাংবাদিক নেছার আহমদ, জেলা যুবলীগ নেতা রনজিত চৌধুরী রাজন ও উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ফারুক আহমদ। যদিও উল্লেখিত ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কার্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন কিন্তু প্রত্যেকেই ব্যাক্তিগত রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান শাহের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন তারা। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহাব উদ্দিন শাবুল ও জাতীয়পার্টি মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলামকেও প্রতিদ্বন্দ্বি রেখে ভোটযুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
এ অবস্থায় ঘরে-বাইরে ৬ প্রার্থীর সঙ্গেই কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী শামছুজ্জামান শাহ। করো কারো মতে, ঘরের কোন্দলই নৌকার বিজয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
নৌকার প্রার্থী শামছুজ্জামানের পাশাপাশি ফতেপুর ইউনিয়নের নৌকা সমর্থক ও ভোটাররা পড়েছেন বেকায়দায়। নৌকা না ব্যক্তি এ দুশ্চিন্তায় কাটছে তাদের সময়।
স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী বিশ্বম্ভরপুরের ফতেপুর ইউনিয়ন ছাড়াও পলাশ ইউনিয়নে আব্দুল কাইয়ূম মাস্টার, সলুকাবাদ ইউনিয়নে আজিজুল হক, বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমানও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
এ বিষয়ে ফতেপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, ‘এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেছেন কার্ড বাণিজ্য হয়েছে তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমারও একই বক্তব্য। আমি বিদ্রোহী প্রার্থী না হলে ধানেরশীষ প্রতীকের প্রার্থী জয়লাভ করবে। তাই জনগণের অনুরোধে নির্বাচন করছি। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আমি।’
মহিবুর রহমান বলেন, ‘আমি জনগণের অনুরোধে নির্বাচন করছি বিদ্রোহী হিসেবে নয়, জনগণ জয় নিশ্চিত করবে।’
নেছার আহমদ বলেন, ‘আমার বাবা এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন। আমি বাবার মতোই জনস্বার্থে নির্বাচন করছি, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নয়।’
ফারুক আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘ দিন আগে ছাত্রলীগ করেছি তবে এখন আমি দলে সক্রিয় নই। আমি পাঁচগাঁওসহ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
নৌকার প্রার্থী শামছুজ্জামান শাহ বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, নির্বাচনে আমার বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকার ভোট নষ্ট করবে, তবুও আমি আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে পারবো বলে আশা করছি। আমি বিদ্রোহী প্রার্থী সম্পর্কে দলের দায়িত্বশীলদের অবগত করেছি।’
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে যারা দলের হয়েও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অবগত করা হয়েছে। আমরা দলের মনোনিত প্রার্থীদের পক্ষেই কাজ করছি।’