ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে : সারাদেশে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট আজ বুধবার (২২জুন) সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত। একজন যাত্রী এক সঙ্গে ৪টি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। ঘরমুখো মানুষের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই টিকিট প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে টিকিট বিক্রির ধীরগতি ও ভ্যাপসা গড়মের কারণে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে টিকিট প্রত্যাশীদের। অনেকে মঙ্গলবার রাতে সেহেরি খেয়েই কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। অনেকে লাইনে পেপার পেতে বসে অপেক্ষা করেছেন টিকিটের জন্য।
এদিকে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে ভোর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের ২০টি কাউন্টারসহ পুর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সব রেলস্টেশনে বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রেল পুলিশ, আমর্ড পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ এই নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে।
যাত্রী নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সহায়তার জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে একটি পুলিশ তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। দেশের যে কোনো রেলস্টেশন, টিকিট, টিকিট সংক্রান্ত সমস্যা, ট্রেন কখন ছাড়বে তার তথ্য ফোন করে ০১৭৫০০৭৮৬৯৭ ও ০১৯৯০০৮৮৭২৮ নম্বর থেকে যে কেউ যখন ইচ্ছে জানতে পারবেন। এছাড়া র্যাব-৩ এর একটি অস্থায়ী ক্যাম্পও খোলা হয়েছে কমলাপুরে।
বুধবার (২২জুন) ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন সরজমিন ঘুরে ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রেল পুলিশের নজরুল ইসলাম নামে এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনের টিকিট বিক্রিকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, কালোবাজারি ঠেকাতে মঙ্গলবার রাত থেকে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া কালোবাজারিকে চিহ্নিত করার জন্য সিসি টিভি স্থাপন করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য যা কিছু দরকার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশেষ ট্রেনগুলোতে এবার নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে।’
ঈদ উপলক্ষে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। এই সময় কমলাপুর স্টেশনজুড়ে পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে বাড়তি ফোর্স।
রেলওয়ের জানায়, ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম চলবে ২২ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত। আজ ২২ জুন বিক্রি করা হচ্ছে ১ জুলাইয়ের টিকিট, ২৩ জুন বিক্রি হবে ২ জুলাইয়ের, ২৪ জুন বিক্রি হবে ৩ জুলাইয়ের, ২৫ জুন বিক্রি হবে ৪ জুলাইয়ের এবং ২৬ জুন বিক্রি হবে ৫ জুলাইয়ের টিকিট। টিকিট থাকা সাপেক্ষে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
ঈদের আগে পাঁচ দিন ও ঈদের পরের পাঁচ দিন ঈদ স্পেশাল ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে বাড়তি সেবা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। এ সেবায় থাকছে সাত জোড়া স্পেশাল ট্রেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। এছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-পার্বতীপুর, ঢাকা-খুলনা রুটে এক জোড়া করে ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে। বাকি দুই জোড়া ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাতায়াত করবে।
এবারও ঈদ উপলক্ষে বিদ্যমান ট্রেনে বগির সংখ্যা বাড়ানো হবে। এজন্য ১৭০টি বগি মেরামত করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫টি অতিরিক্ত ইঞ্জিনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে রেলওয়ের রোলিং স্টক বিভাগ থেকে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সীমিত সম্পদের মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা শতভাগ প্রস্তুত। ঈদ উপলক্ষে আজ (বুধবার) থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে অগ্রিম টিকিটের কালোবাজারি বন্ধে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এ উপলক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে র্যাব, পুলিশ, জিআরপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। টিকিট বিক্রিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।’
পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রতিদিন ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের টার্গেট নেয়া হয়েছে জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত প্রতিদিন বিভিন্ন স্টেশন থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। সেখানে আমরা ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো বাড়তি যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি।’
এছাড়াও সম্ভাব্য নাশকতা বা অন্য যে কোনো বিশৃঙ্খলা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থঅনে রয়েছে বলেও জানান রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক।