ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ ও আসন্ন অশান্তি
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পক্ষে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের নাগরিকরা। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক গণভোটের ফলাফলে ৫২ শতাংশ ত্যাগের পক্ষে ভোট দিয়েছে, থাকার পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৮ শতাংশ। গণভোটের এ ফলাফল প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যে মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজারে এ ফলাফলের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রশ্নে গণভোটে ত্যাগের পক্ষে রায়ের আভাস পাওয়া মাত্রই এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পরে এই গণভোটই সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে।
একদিনের মধ্যে নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছে পাউন্ডের মূল্যমান। গত ৩০ বছরে এই দর নেমে গেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।ফলাফল আসার আগে পর্যন্ত পাউন্ডের মূল্য ১ দশমিক ৫০ ডলারে উঠে গেলেও উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ড থেকে নেতিবাচক ফলাফল আসতে শুরু করলে তা কমে ১ দশমিক ৪৩ ডলারে নেমে যায়।
লন্ডনের শেয়ার বাজারে একদিনে এই দরপতন বিরল চিত্র। পাউন্ডের মূল্য কমে গেলে স্বভাবতই বিদেশি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। এদিকে ডলারের বিপরীতে ইউরোর মূল্য কমেছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা কি না ইউরোর ইতিহাসে প্রথম।
ভোটের এই ফলাফলের মাধ্যমে ইইউ’র সাথে ব্রিটেনের যে ডিভোর্স প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার রেশ কমপক্ষে ২ বছর টানতে হবে। কিন্তু তারপরও ব্রিটেনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন চাপের মুখে, কারণ ব্রিটেনকে স্থিতিশীল করা তার জন্য কঠিন কাজ হবে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় তার সবই তারা করবেন। আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকরাও বাজার স্থিতিশীল করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। যেমন জাপানের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, অর্থ সঙ্কট কাটাতে প্রয়োজনমত সাহায্য করবে তারা।
ব্রিটেনের ইউরোপ ত্যাগের পক্ষে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করেছে বড় বড় ব্যবসায়ী ও বিশ্ব নেতারা। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত ব্রিটেনকে ইইউ’র সাথে থাকার জন্য তাগাদা দিয়েছেন। যদিও পক্ষে বিপক্ষে অনেক বাকবিতণ্ডা হয়েছে, কিন্তু অবশেষে ফলাফল হাজির।
বর্তমানে ব্রিটেনের সামনে রয়েছে টিকে থাকার লড়াই। কারণ স্কটল্যান্ড ৬২ শতাংশ ভোট দিয়েছে ইইউ’তে থাকার। কাজেই তারা যুক্তরাজ্যের সাথে থাকবে কি না সেটা নিয়ে আরেকটি গণভোটের সূচনা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
তাছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক ভোট হিসাব করলেন দেখা যায়, লন্ডনের হ্যারিঙ্গে পৌর এলাকায় ভোটের ফল ৭০ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে, ৩০ শতাংশ বিপক্ষে। স্কটল্যান্ডে ৬০ শতাংশের বেশি জোটের পক্ষে, কিন্তু ইংল্যান্ড এবং ওয়েলশ বিপক্ষে। মধ্য ইংল্যান্ডের লেস্টার জোটে থাকার পক্ষে, পাশের শহর বার্মিংহাম বিপক্ষে। পুরো দেশের হিসাব ৫১.৯ শতাংশ বিপক্ষে, ৪৮.১ পক্ষে। ফলে, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের উত্থানের একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।এতে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে গ্রেট ব্রিটেন। অভিবাসীরাও এই ব্রিটেনকে নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ার যথেষ্ট শর্ত তৈরি হয়েছে।
ইতিমধ্যে স্কটিশ মন্ত্রী বলেছেন, বৃহস্পতিবারের ভোটে এটা স্পষ্টভাবেই বোঝা গেছে যে, স্কটল্যান্ড তাদের ভবিষ্যৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেই দেখতে চায়। আয়ারল্যান্ডেও একই চিত্র। তারা এখন ব্রিটেনের সাথে থাকবে কি না সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছে।
ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যপথে যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে সেটা পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজারে জড়িত মানুষের পক্ষে দুঃস্বপ্নের মত লাগছে। অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বহুদিনের স্থিতিশীলতা। এমনকি নীতিনির্ধারকরা জানেন না সঙ্কট কিভাবে মোকাবেলা করবেন। অশান্তির পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে।