জঙ্গিহামলা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ নিরাপত্তা

2016_03_08_11_54_45_EqzZxPDMjiqssVD5ZqHQ8IwwgGUo86_original

ঢাকা : আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ও জঙ্গিহামলা ঠেকাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রশাসনের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। এ উপলক্ষে সোমবার (১১ জুলাই) মিটিংও করেছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সর্বোচ্চ আদালতের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও মিটিং করা হবে বলে জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বাংলামেইলকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়ে আসছেন।’

জঙ্গিহামলা থেকে বাঁচতে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আবেদন করা হবে বলেও জানান সাব্বির ফয়েজ। ইতোমধ্যে একটি আবেদনপত্র তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে আমরা আগেও চেষ্টা করেছি। এখনও করছি। এ বিষয়ে আমরা মিটিং করেছি, আরও মিটিং করব।’

গত ১ জুলাই গুলশানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার এক সপ্তাহ না পেরোতেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। সোমবার আদালতের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি।

আগামীকাল বুধবার (১৩ জুলাই) নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বৈঠক ডেকেছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। এতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারাও নিরাপত্তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ করা হয়েছে। এখনও তা চলছে। বুধবার সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসব।’

আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আমরা নিজেরা বসে আলোচনা করেছি। প্রধান বিচারপতিও এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন।’

সুপ্রিম কোর্ট স্পর্শকাতর জায়গা হওয়ায় নিরাপত্তার যেন কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে, এ জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে ‘বিশেষভাবে’ বলা হয়েছে। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটি সারা বিশ্ববাসীর নজরে আসতে পারে বলে এখানে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বরত ঢাকা মহানগর পুলিশের এক গোয়েন্দা সদস্য বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাদেরকে সুপ্রিম কোর্টে নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষভাবে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। মাজার গেটে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উপরের নির্দেশনা পেয়ে যথারীতি দায়িত্ব পালন করছি।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘রাষ্ট্র স্বাভাবিক নিয়মে চলছে না। অপরাধীকে ধরে ক্রসফায়ার দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার যুবকদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য খোলা মাঠ ও পরিবেশ নেই। ফলে তারা ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে ব্রেন ওয়াশড হচ্ছে। তারা সুস্থ চিন্তা করতে পারছে না। ফলে জঙ্গির উত্থান হচ্ছে।’

ক্রসফায়ার আইনের শাসনের পরিপন্থি মন্তব্য করে এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘অনেক কাজ আইনের শাসনের পরিপন্থি হওয়ায় রাষ্ট্রে জঙ্গির উত্থান হচ্ছে। এগুলো থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রকে গণতন্ত্র রক্ষা করে কাজ করতে হবে।’

সুপ্রিম কোর্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগের চেয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থায় কড়াকড়ি কিছুটা বেড়েছে। মূল ভবন ও এনেক্স ভবনে কাউকে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আইনজীবী ছাড়া অন্যদের এই দুই ভবনে প্রবশের সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে আইনজীবী ভবনে প্রবেশে কোনো কড়াকড়ি নেই।

আদালতে ঢুকতে গেটগুলোতে পুলিশের পাহারা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের দক্ষিণ পাশের ফটকে গাড়ি প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের পর যেতে দিচ্ছে পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকেও একই অবস্থা।

এদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশের মসজিদের সামনের গেটটি। তবে মাজার গেট দিয়ে রিকশাসহ সব ধরনের গাড়ি প্রবেশ করছে। সম্প্রতি নতুন করে তৈরি ‘ন্যায় সরণি’তেও কোনো পাহারা নেই। এই পথে পাহারা বসানোর জন্য তাগিদ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

দেশের এই সর্বোচ্চ আদালতের নিরাপত্তার দেখভালের দায়িত্ব পালন করে মূলত পুলিশ বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা আদালত এলাকার মূল ফটকগুলোতে টহল দেন। এ ছাড়া ভেতরেও দায়িত্ব পালন করে বাহিনীটির বিভিন্ন দল। সাদা পোশাকেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে গোয়েন্দারা।

বিচারপতিদের বাসা থেকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় থাকে পুলিশের নিরাপত্তা দল। পাশাপাশি বিচারপতিদের গাড়িতেও থাকেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। এর পরেও আদালত অঙ্গন, বিচারপতি, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সকলের নিরাপত্তা বাড়াচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

মন্তব্য