খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই পাঁচ ব্যাংকের

2016_08_01_21_13_28_QxH7uJhh3cHy038nLffjiRmzsqts57_original

ঢাকা: দেশের ব্যাংকগুলোতে বাড়ছেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বিশেষ করে পাঁচ ব্যাংকের নিকট আটকে আছে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ। অনিয়ম দুর্নীতি আর নানা কারসাজির কারণে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৫ প্রকাশনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ৫৬ ব্যাংকের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ। আর বাকি ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে ৫০ দশমিক ৫১ শতাংশ খেলাপি ঋণ।

অন্যদিকে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিমাণ হিসাব করলে দাঁড়ায় মোট খেলাপি ঋণের ৬৪ শতাংশ। বাকি ৪৬ ব্যাংকে খেলাপি রয়েছে  মাত্র ৩৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর নাম উল্লেখ না করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, বেসিক, জনতা, অগ্রণী ও বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের।

প্রতিবেদন প্রকাশকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন তিনি।

গভর্নর বলেন, দেশে উন্নত ঋণ সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৃহদাঙ্কের ঋণগুলোর নজরদারিকে অধিকতর জোরালো ও কাঠামোবদ্ধ করার লক্ষ্যে সেন্ট্রাল ডাটাবেজ ফর লার্জ ক্রেডিট (সিডিএলসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ  এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে খেলাপি ঋণ কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও জোরদার করতে হবে বলেও তাগাদ দেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ শতাংশের দিক দিয়ে কমলেও পরিমাণের দিক দিয়ে বেড়েছে।

২০১৪ সালের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২০১৫ সালে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। আলোচ্য সময়ে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিমাণ ছিল ৬৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।

দেখা গেছে, ২০১৫ সালে কৃষি খাতে ২৮০ দশমিক ২১ বিলিয়ন ঋণ বিপরীতে খাতটিতে ৪০ দশমিক শূণ্য ৬ বিলিয়ন ঋণ খেলাপি হয়েছে। বাণিজ্যিক ঋণে ১ হাজার ২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ঋণের বিপরীতে ৮৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন খেলাপি ঋণ। শিল্প ঋণে ৭৫৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ঋণের বিপরীতে ৭৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন খেলাপি ঋণ হয়েছে।

এছাড়া তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতে নেয়া ৭৩৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬১ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৪টি খাত উল্লেখ করে খাতভিত্তিক ঋণের চিত্র তুলে ধরেছে। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ৭৩ দশমিক ৮২ শতাংশ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে ৫ খাতে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ রয়েছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে বৃহৎ শিল্পে। শীর্ষ পাঁচটি খাতের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিবিধ খাতে রয়েছে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আমদানি অর্থায়নে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সেবা খাতে রয়েছে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং কৃষি খাতে রয়েছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। আবাসন, রপ্তানিসহ বিভিন্ন ১৭টি খাতে রয়েছে ১৫দশমিক ৭০ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট মূলত বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে থাকে। আর্থিক খাতের গতি প্রকৃতি, স্থিতিশীলতাও তার প্রভাব এবং তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ, সম্পদের মান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও তারল্যের নির্দেশকগুলো এখানে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো উঠে আসে এই প্রতিবেদনে।

মন্তব্য