দুর্নীতি-দুঃশাসন চরম আকার ধারণ করছে

khaleda

ঢাকা: দেশে দুর্নীতি-দুঃশাসন চরম আকার ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘দেশে আজ ন্যায় বিচার নেই। জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। দেশের  জনগণ চরম দুর্দিন অবস্থান করছে। এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য বর্তমান সরকার দায়ী। বর্তমান সরকার জনগণের ভাগ্যউন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখছেনা। তারা মেতে আছে দমননীতি নিয়ে।সরেকারের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা-গুম অপহরণে মেতে উঠেছে।’

এসময় সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দলের পক্ষে ভিশন’২০৩০ ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন বদলে গেছে। কিন্তু মেধা ও দক্ষতা থাকা সত্বেও আমাদের দেশ এখনও পিছিয়ে। দেশে নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নেই। জাতি হিসেবে আমাদের বর্তমান এখন সঙ্কটে আর ভবিষ্যৎ অন্ধকার-অনিশ্চিতে। এ পরিস্থিতিতে জাতিকে দেখাতে হবে নতুন দিক-নির্দেশনা।’ বিএনপির কাউন্সিলই সেই পথ দেখাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিরোধী দলে থেকেও বিএনপি দেশকে এগিয়ে নেয়ার রাজনীতি করে এসেছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি সবসময়ই গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ দিয়ে এসেছে। কিন্তু কখনো ক্ষমতাসীন দলের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।’

এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে কাউন্সিল উদ্বোধন করেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার নেতা-কর্মীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। সম্মেলনে উপস্থিত সবাই জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।

জাতীয় সঙ্গীতের পর পরিবেশন করা হয় বিএনপির দলীয় সঙ্গীত । এরপর ষষ্ঠ কাউন্সিলের থিমসং পরিবেশিত হয়। সকাল ১০টা ২৮ মিনিটের দিকে তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এসে পৌঁছান বেগম জিয়া। গেটে তাকে স্বাগত জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। এসময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো কাউন্সিলস্থল।

এর আগে ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে তার বাসভবন ফিরোজা থেকে নিজস্ব নিরাপত্তা (সিএসএফ) বলয়ে রওনা দেন তিনি। অবশ্য সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের।

এদিকে কাউন্সিলস্থলে জড়ো হয়েছেন সারা দেশ থেকে আসা দলের নেতাকর্মীরা। ভোর থেকেই আসতে শুরু করেন তারা। আমন্ত্রিতরা মঞ্চের সামনে নিজ নিজ সংরক্ষিত আসনে বসছেন।

বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দলের চেয়ারপারসন পদে বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমান আগামী তিন বছরের জন্য বিনা প্রতিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মূল ফটকের সামনে দীর্ঘ লাইনে আমন্ত্রিতদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। নির্দিষ্ট কার্ড থাকা সত্ত্বেও ভেতরে প্রবেশে তাদের দারুণ বেগ পেতে হচ্ছে। ধাক্কাধাক্কি করে তাদেরকে প্রবেশ করতে হচ্ছে।  স্বেচ্ছাসেবীদের তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়।

প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, কবি আল মুজাহিদী, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, এম আবদুল্লাহ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ ছিলেন।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, কুয়েতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। তাদের কয়েকজন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন অলি আহমদ, সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, শফিউল আলম প্রধান, মোস্তফা জামাল হায়দার, খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি, মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, রেদোয়ান আহমেদ, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, আহমেদ আবদুল কাদের, সাহাদাত হোসেন সেলিম, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এম মোরশেদ খান, রাবেয়া চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, হারুন আল রশীদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাহমুদুল হাসান, ওসমান ফারুক, আবদুল মান্নান, মীর নাসিরউদ্দিন, এ জে মোহাম্মদ আলী, মুশফিকুর রহমান, আবদুল হালিম, রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আমীনুল হক, আবদুল কাইয়ুম, জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জহুরুল ইসলাম, আহমেদ আজম খান, মিজানুর রহমান মিনু, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুল হাবিব দুলু, ফজলুল হক মিলন, মশিউর রহমান, মজিবুর রহমান সারোয়ার, গোলাম আকবর খন্দকার, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, জিএম ফজলুল হক, কাজী আসাদুজ্জামান, সৈয়দ মোয়জ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নিতাই রায় চৌধুরী, কারাবন্দি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, শামা ওবায়েদ।

ছাত্রনেতাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন-সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, বিএম নাজিম মাহমুদ, রাজিব আহসান, আলমগীর হাসান সোহান, সাদিউল কবির নীরব, বায়েজিদ আরেফিন প্রমুখ।
বিএনপি নেতাকর্মীদের আশা, কাউন্সিল থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক আসবে। এছাড়া দলটি এ জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করবে।

এবারের কাউন্সিলের স্লোগান হচ্ছে- ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ।’ তবে বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও (জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস) আলাদা আলাদা স্লোগান ঠিক করেছে। নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি করেছে তারা। কাউন্সিলের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মুক্ত করবই গণতন্ত্র’।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরের বছর জানুয়ারিতে গঠন করা হয় ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কাউন্সিল হয়। দ্বিতীয় কাউন্সিল হয় ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর এর আট বছর পর ১৯৮৯ সালের ৮ ও ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় দলটির তৃতীয় কাউন্সিল। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর চতুর্থ কাউন্সিল করে বিএনপি।

 

মন্তব্য