ভোলায় গাছে বেঁধে নারীকে পেটালেন যুবলীগ নেতা!

2016_05_07_08_54_48_cOdh71lhEo0oEv89DD8VWaEIa6QSX6_original

বরিশাল : ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদি হয়ে থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন।

নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিচারের দাবি। সরকারি দলের কর্মী বলে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, অভিযোগ উঠেছে এমনও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার সাবেক নীলকোমল বর্তমান নুরাবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নজির মাঝিরহাট এলাকার নজির মাঝির ছেলে যুবলীগ নেতা মো. কামরুল ইসলাম কাজলের (৩০) সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী এলাকার গৃহবধূর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। সেই বিষয়টি স্বামী টের পেলে তাকে তার বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। এ সুযোগে কাজল আর ওই নারীর  পরকীয়া সম্পর্ক আরো গভীর হয়ে ওঠে।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে কাজল তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতেন। এমনকি তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ভোলা, বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন বাসায় রেখে স্বামী-স্ত্রীর মতো রাত কাটিয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন বিয়ের কথা বলার পরও কাজলের খামখেয়ালি দেখে বাধ্য হয়ে বুধবার তার বাড়িতে বিয়ের দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজল ও তার পরিবারের লোকজন তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ির পাশে একটি সুপারী গাছের সঙ্গে বেঁধে কয়েক দফা মারধর করে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন সদর হাসপাতালে ভর্তি করা।

এদিকে  ওই নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম কাজল রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ওই নারী স্থানীয় মিডিয়াকর্মীদের অভিযোগ করেন, কাজলের কারণে তার সংসার ভেঙে গেছে। এখন কাজল তাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে বুধবার তার বাড়িতে বিয়ের দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজল বিয়ে করা তো দূরের কথা উল্টো তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে।

তাই ওই নারী কাজলের বিচার চেয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। যুবলীগ নেতা কাজলের শাস্তি দাবিতে ফুঁসে উঠেছে।

তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সমূলে অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামূল জানান, অভিযুক্ত কাজলকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু ঘটনার পরপরই তিনি গাঢাকা দেয়ায় গ্রেপ্তারে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না।

বিষয়টি বেশ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে সে কথা স্বীকার করে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলছেন, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেয়া হয়েছে। এমনকি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। যদি এতে কোনো কর্মকর্তার গাফলতি বা অবহেলা থাকে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পুলিশের দাবি, নির্যাতনকারী কাজল ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন। যে কারণে তাকে গ্রেপ্তারে সফলতা আসছে না। তবে স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা যুবলীগের সদস্য কাজল এলাকাতেই রয়েছেন এবং তাকে প্রতিনিয়ত দেখাও যাচ্ছে। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন দলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি বা করছে না।

ফলে পুলিশের এ ভূমিকা নিয়ে নানামুখি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি পুলিশের নিরব থাকার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এক ধরনের নিরব প্রতিবাদ চলছে। বিশেষ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকারও তার ফেসবুকের পেইজে এ বিষয়টি নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন।

নির্যাতনের শিকার সেই যুবতী মাটিতে পড়ে থাকা ছবিসহ দেয়া ইমরান এইচ সরকারের পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সুপারী গাছের সঙ্গে বেঁধে একজন নারীকে এভাবে নির্যাতন তো মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়! আপনাদের ক্ষমতা আছে বলে কি যা ইচ্ছা তাই করে যাবেন, আর আমরা গুম-খুন হবার ভয়ে চুপ করে থাকবো? ভোলার চরফ্যাশনে কি কোনো সাহসী পুলিশ নেই, যারা যুবলীগ নেতা কাজলের হাতে হাতকড়া পরাবে? এই মগের মুল্লুকে কি কেউ নেই একটু মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো?’

মন্তব্য