গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করা সেই চেয়ারম্যানকে শপথ পড়ালেন ডিসি

2016_05_11_10_38_29_4mRZl6A5KBzaajLUkZhu52QZCGdYwz_original

পটুয়াখালী : গৃহবধূ ও তার দেবরপুত্রের মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আসামি গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্বপনকে শপথ পাঠ করালেন জেলা প্রশাসক একেএম সামিমুল হক।

মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের দরবার হলে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্বপনসহ গলাচিপার নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথবাক্য পাঠ করান। কিন্তু দীর্ঘ দেড় মাসেও পুলিশ সেই অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে খুঁজে পায়নি।

শপথ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের পাশেই উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান। এছাড়া নারী সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা, জেলা পরিষদের প্রশাসক খান মোশারেফ হোসেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, গলাচিপার উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গলচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের কাছে গজালিয়ায় গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা   মামলাটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ মামলায় এখনও অভিযোগপত্র দেয়া হয়নি, আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।’

তবে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘গেজেট অনুযায়ী গলাচিপায় নির্বাচিত সকল চেয়ারম্যানদের শপথ পড়ানো হয়েছে। এখানে কে চার্জশিটভুক্ত আসামি এ তথ্য আমাদের কাছে থাকার কথা নয়।’

আর পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান বলেন, ‘আজ মূলত জেলা প্রশাসকের দরবার হলে আইনশৃঙ্খলা কমিটির নির্ধারিত সভা ছিল। তবে সেখানে গলচিপার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথ পড়ানো হবে বা সেখানে অভিযুক্ত কোনো চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন এমন তথ্য আমার জানা ছিল না।’

এদিকে, পুলিশের কাছে পলাতক হয়েও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শপথ গ্রহণের ঘটনায় গজালিয়া তথা গলাচিপা উপজেলার সাধারন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


অভিযুক্ত নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খালেদুল ইসলাম স্বপন

স্থানীয়রা জানান, এর আগেও এমপির ভাই স্বপন অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে। প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয় না এবং কেউ থানায় অভিযোগ করতে সাহস পায় না। বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক মেয়েকে বিয়ে না দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে বিয়ে না করায় গত বছর স্বপনের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী কোর্টে মামলা করেছিল নির্যাতিত মেয়েটি। অর্থ ব্যয় করে সেই মেয়ের অভিভাবকদের ম্যানেজ করে নিয়েছে স্বপন। ওই গৃহবধূকেও কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। রাজি না হওয়ায় এমনটি করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ শনিবার দুপুরে গজালিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব রাঢ়ীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম এবং তার চাচাত ভাতিজা মিজান রাঢ়িকে গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ডেকে নিয়ে যায় ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এএম কুদ্দুস মিয়া এবং নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্বপন। তাদের সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বসিয়ে রেখে শুরু করা হয় শালিশ বৈঠক। এতে এমপির ভাই স্বপন সকলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় উভয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে তাই দুইজনে দোষী। এ কারণে দুইজনের মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন তিনি। একইসঙ্গে ভাতিজা মিজান রাঢ়ির ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রাত ৮টায় এ সিদ্ধান্ত দেয়ার পর স্বপন ওই দুইজনকে ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ পার্শ্বের মাঠে নামিয়ে বেদম লাঠিপেটা করেন। একপর্যায়ে রাবেয়া বেগমের পরিধানের বস্ত্র খুলিয়া ফেলে। এ সময় রাবেয়া বেগমের ওপর যৌনপীড়নের ঘটনা ঘটানো হয়। দুইজনকে লাঠিপেটার পর পরিতোষ শীল নামে এক নাপিতকে ডেকে নিয়ে আসা হয় ওখানে। তাকে দিয়ে মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন রোববার স্থানীয় সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের ভাই স্বপনসহ সাতজনকে আসামি করে গৃহবধূর স্বামী মো. হাবিব রাঢ়ি গলাচিপা থানায় মামলা করেছেন।

মন্তব্য