সিরাজগঞ্জে এলজিইডির কর্মকর্তাসহ নিখোঁজ ১৭

2015_09_08_08_16_56_8oqx9Lm4WGRd45QPpC9ApwCOIQqi87_original

সিরাজগঞ্জ : এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাসহ জেলায় এ পর্যন্ত ১৭ জন বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। প্রায় দেড় বছর ধরে এরা নিখোঁজ রয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ জনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর থানার পাঁচজন, উল্লাপাড়া থানার চারজন, তাড়াশে একজন, কাজীপুর থানার একজন এবং চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থানায় একজন রয়েছেন।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে পুলিশের তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে সবকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) এসব তালিতা প্রস্তুতে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ওসিদের মাঠপর্যায়ে সরেজমিনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির নির্দেশ রয়েছে।

ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনার পর থেকেই এসব তালিকা তৈরির কাজ চলছে। জেলার শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত যমুনার চরাঞ্চলে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলার আশঙ্কায় পুলিশের অভিযান চলছে বলে পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

সিরাজগঞ্জে নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন-এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের জেলা সমাজবিজ্ঞানী শাহজাদপুর উপজেলার উল্টাডাব গ্রামের আবদুল হামিদ সরকারের ছেলে হাবিবুর রহমান আলী জিন্নাহ (২৭), তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ছাকমান প্রামাণিকের ছেলে ময়দান আলী (৪০), উল্লাপাড়া উপজেলার রাউতান গ্রামের হায়দার আলী সিদ্দিকির ছেলে জাভেদ সিদ্দিক (২৫), দাদপুর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে হাফেজ আবদুল মোমিন (২৭), শেখপাড়া গ্রামের কে এম সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৩) ও চুড়ুইমুরী গ্রামের আনসেদ প্রামাণিকের ছেলে হাফেজ মাসুদ রানা (২৭), এনায়েতপুর থানার ছারোয়ার হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন (১৬), কাজীপুর উপজেলার বেরী পোটল গ্রামের সেলিম হোসেনের ছেলে আরমান রেজা (১৫), সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘলগাতী গ্রামের মৃত হাজী খলিলুর রহমানের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৩৫), রাঙ্গালিয়াগাতী গ্রামের মনিরুজ্জামানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৭), মৃত আফজাল হোসেন খানের ছেলে কাওছার খান (৪০), পশ্চিম গজারিয়া গ্রামের আবদুল সেখের ছেলে আবদুল মোমিন (২৩)।

এছাড়া সাধারণ ডায়েরি করা হয়নি এমন আরও পাঁচজন ছেলের নিখোঁজ হওয়ার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাদের নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের বয়স ১৪-৩০ বছর। এরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র।

পুলিশের অপর সূত্র জানায়, পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ছাত্র। এর মধ্যে মাদরাসা ও পলিটেকনিকের ছাত্র বেশি। পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন থানায় করা ডায়েরি থেকে জানা গেছে, এসব ছেলে দেড় বছর ধরে নিখোঁজ। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে তারা হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেছে। এরপর আর তারা পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। এদের মধ্যে যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন তাদের ফোনগুলো নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে জানা যায়, এনায়েতপুর থানার জাকির হোসেন দশম শ্রেণির ছাত্র। সে গত ২ জুলাই নিখোঁজ হয়। সে ঘরে ভাইদের সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকার পর রাতের কোনও এক সময় ঘর থেকে বের হয়ে চলে যায়। উল্লাপাড়ার দুর্গানগর ইউনিয়নের বালসাবাড়ি মাদরাসা থেকে হাফেজ আবদুল মোমিন আট মাস আগে তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে কাকরাইলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। এরপর থেকে তার সন্ধান নেই। বাকি নিখোঁজরা বাড়ি থেকে নিজেদের ইচ্ছায় চলে গেছে। এসব বিষয়ে পরিবারও সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করার পর হাবিবুর রহমান জিন্নাহ আমাদের দপ্তরে যোগদান করেন। একেবারেই তরুণ। অবিবাহিত। নম্র ও ভদ্র ছিল। নিয়মিত নামাজ পড়তো। গত বছরের ২৪ অক্টোবর হঠাৎ কর্মস্থল থেকে উধাও হন তিনি। গুলশানে জঙ্গিদের সঙ্গে ঠিক মিলে যায়। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় জিডি করা হয়েছে। আমরাও বেশকটি পত্রিকায় তার ছবিসহ নিখোঁজ সংবাদ ছপিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি।’

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিশেষ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ এ তথ্য সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিভিন্ন থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে করা সাধারণ ডায়েরি থেকে এদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপরদিকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়নি অথচ নিখোঁজ রয়েছে এমন আরও ৫ ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।’

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তালিকা প্রস্তুতকরণ এখনও শেষ হয়নি। সিরাজগঞ্জে এখন পর্যন্ত জঙ্গি হামলার কোনো ঘটনা না ঘটলেও হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সিরাজগঞ্জে কতিপয় ব্যক্তি ওই নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে সিরাজগঞ্জের বাইরে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে।’

মন্তব্য