কেক কাটেননি খালেদা জিয়া, কেটেছে ছাত্রদল

3_124014_2

জাতীয় শোক দিবসে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল আগের মতই নেত্রীর জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করেছে দিনটিকে। প্রথম প্রহরে ঘটা করে কেক কেটে সে ছবিও প্রকাশ করেছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

১৫ আগস্টে জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, এটা খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্মদিন নয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো জীবনীতে অন্য একদিন জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তবে এবার জন্মদিনের আয়োজন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন খালেদা জিয়া। এমনকি তাকে শুভেচ্ছা জানাতে নেতারা ফুল নিয়ে গেলে তিনি তা গ্রহণও করেননি।

খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বিএনপি ও এর প্রায় সবগুলো অঙ্গ সংগঠনের নেতারা দলীয় প্রধানের ‘জন্মদিন’ পালন থেকে বিরত থাকে। তবে ব্যতিক্রম শুধু ছাত্রদল। সংগঠনটির সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এবং বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা কেক কেটে তাদের নেত্রীর জন্মদিন পালন করেছেন।

ছাত্রদলের এক নেতা দাবি করেন, চেয়ারপারসন জন্মদিন পালন না করার কথা বললেও তাদেরকে কেউ নিষেধ করেননি। তাই তারা তাদের মত করে আনন্দ করেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এইদিন চেয়ারপারসনের জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ছাত্রদল কী করেছে তা জানি না। তবে সামগ্রিক অবস্থায় ম্যাডামের সিদ্ধান্ত মেনে নিলে ভালো হতো।’

নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া নেতারা ফিরেছেন খালি হাতে

জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়ার পর খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন উদযাপন না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন দলের প্রতি অনুগত বুদ্ধিজীবীরা। জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টায় করা বৈঠকেও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী একই পরামর্শ দেন। এরপর ১৪ আগস্ট বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়,এবার জন্মদিনের অনুষ্ঠান করছেন না বিএনপি প্রধান। শুধু তাই নয়, তিনি গুলশানে কাউকে কেক নিয়ে যেতেও বারণ করেন।

তবে রবিবার রাত ১০টার দিকে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,বিলকিস জাহান শিরিন, নূরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানাসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। এসময় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গেলেও নেতাদের ফুল নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। যারা ফুল নিয়ে গেছেন তারা গাড়িতে রেখে ঢুকেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ও স্ব-নির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাকে কার‌্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় মহিলা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

নিষেধ মানলো না ছাত্রদল 

কেন্দ্রীয় নেতারা যখন নেত্রীর ‘জন্মদিন’ পালন করেননি তখন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল চলেছে আগের মতই। সংগঠনের সভাপতি রাজিব আহসান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কেক কেটে দলীয় প্রধানের জন্মদিন পালন করেন।

চেয়ারপারসনের নিষেধের পরও কেক কাটার বিষয়ে জানতে এই দুই নেতার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আশরাফুল রহমান বাবু নিজের ফেসবুক ওয়ালে সভাপতির কেক কাটার একাধিক ছবি পোস্ট করেছেন।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটওয়ারী ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘আমি এ বিষয়ে আসলে কিছু জানি না। সভাপতির সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা গেছে ছাত্রদল সহসভাপতি আজমল হক পাইলট নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কেটেছেন। জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অন্যান্য বছর চেয়ারপারসন নিজে কেক কাটেন এবার তিনি কাটেননি। তিনি কাটবেন না বলেছেন,কিন্তু কাটতে তো নিষেধ করেননি। তবে অন্য সময়ের মতো এবার আমরা জাঁকজমপূর্ণ আয়োজন করিনি’।

পাইলট নামে একজন কেক কাটার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, খালেদা জিয়া জন্ম দিয়েছেন বলেই ১৫ আগস্ট একটি শুভ দিন। তিনি লিখেন ‘এই দিনে তিনি (খালেদা জিয়া) জন্ম নিয়েছেন বলেই দিনটি আজ  শুভ। পরম করুনাময় রাব্বুল আলামিন দেশনেত্রীর শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দান করুন।আমিন’

ছাত্রদল নেতা জুলহাস আহমেদের পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, রাত ১২টার পর কেক কেটে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করে সংগঠনের ঢাকা কলেজ শাখা।

অন্য একটি ছবিতে দেখা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিকও নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কেটে চেয়ারপারসনের জন্মদিন পালন করছেন।

মন্তব্য