বদলে যাওয়া মাহমুদুল্লাহ
ঢাকা: ঠিক এক বছর আগের কথা। শ্রীলংকার বিপক্ষে হোম সিরিজে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের রান ছিল যথাক্রমে- ০,১,৫। তখন ঐ সময়ের ওয়ানডে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে বারবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেন, মাহমুদুল্লাহ কি এখনো খেলবে? কেন তিনি সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করেন, এরকম আরও অনেক প্রশ্ন?
তবে ওই সময় মুশফিকও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেন, ‘সে (মাহমুদুল্লাহ) খুব ভালো ব্যাটসম্যান, আশা করি দ্রুত ফর্মে ফিরবে’। ঠিক এক বছর পর সেই মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা ফর্মে। নতুন নতুন রেকর্ড গড়ে সাবেক গ্রেটদের ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ও টানা দুটি সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। এমন কীর্তি বিশ্বের খুব কম ব্যাটসম্যানেরই আছে।
যদিও ক্যারিয়ারে ৯৯ ইনিংসের মধ্যে সাত নম্বরে ব্যাট করেছেন ৬৩ বার। আট ও নয় নম্বরেও ব্যাট করেছেন তিনি। তিন থেকে নয় নম্বর সব জায়গাতেই ব্যাট করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই ডানহাতি অলরাউন্ডারের। অথচ কখনও টিম ম্যানেজম্যান্টকে মুখ ফুটে বলেননি আমাকে উপরে ব্যাট করার সুযোগ দিন। টিম ম্যানেজম্যান্ট দেরিতে হলেও বুঝতে পারল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অনেক উপরের ব্যাটসম্যান।
ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তনই কি মাহমুদুল্লাহর সেরাটা বের করে এনেছে? ক্যারিয়ারে ৯৯ ইনিংসের ২৯ বার অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ থেকে তাকে চার নম্বর পজিশনে উঠিয়ে আনা হয়েছিল। আর এই পজিশনে মোট সাত ইনিংস ব্যাট করেছেন রিয়াদ। চার নম্বরে ১৫২ গড়ে তিনি করেছেন দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। অপরাজিত চারবার। অথচ ছয় নম্বরে তার গড় ছিল ২২, আর সাত নম্বরে ৩৩। তিন নম্বরে তার ব্যাটিং গড় ৪৮.৫০।
একাধিকবার ব্যাটিং অর্ডার পজিশন পরিবর্তন করে আট নম্বরে ব্যাট করতে দেখে একবার সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সেরা আট নম্বর ব্যাটসম্যান।’ তখন মাহমুদুল্লাহর উদ্দেশ্যে এই প্রশংসা যে মানায় না সেটা বোঝালেন একটু দেরিতেই। মাহমুদুল্লাহ যে আরও উপরের ব্যাটসম্যান তা পারফরম্যান্সের মাধ্যমেই প্রমাণ করছেন তিনি। তবে টিম ম্যানেজম্যান্টকে তিনি কখনও বলেননি, আমি উপরে ব্যাট করতে চাই।
বিশ্বকাপে প্রত্যেক ম্যাচেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপে আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রিয়াদের রান যথাক্রমে- ২৩, ২৮, ৬২, ১০৩ ও ১২৮*। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বোলাররাতো তাকে আউটই করতে পারেনি। তবে শুধু ব্যাটিং অর্ডারে নয় নিজের সেরা পারফরম্যান্স বের করার জন্য অনেক কঠোর পরিশ্রমও করে যাচ্ছেন তিনি। পরিবর্তন এনেছেন নিজের শট নির্বাচনেও।
আগে ব্যাটের কানায় লেগে একাধিকবার বোল্ড হয়েছেন। অসহায় দৃষ্টিতে দেখেনে সেই দৃশ্য। তবে এখন অধিকাংশ বলগুলো মাঝ ব্যাটেই খেলার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে চাপের সময়ও ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে যান। কঠিন চাপের মধ্যেও রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও নতুন করে প্রাণ এনে দিয়েছেন রিয়াদ। আর তাই ভারতের বিপক্ষে তার কাছে আরেকটি ঝলমলে ইনিংসের প্রত্যাশা করছে টাইগার সমর্থকরা।