ফখরুলের জায়গায় খসরু!
ঢাকা : কাউন্সিলের এক সপ্তাহ পার হলেও নেই নতুন মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটি। ফলে বিএনপির সর্বস্তরের নেতারা প্রবল উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন গুনছেন। মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চূড়ান্ত তালিকায় থাকলেও তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। নতুনভাবে এ পদে আলোচিত হচ্ছে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম।
নতুন কমিটির অপেক্ষায় থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য টু শব্দ না করলেও ভেতরে ভেতরে নানা সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করছেন।
দলের বড় একটি অংশের প্রত্যাশা ছিল কাউন্সিলে মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম ঘোষণা করা হবে। অধিবেশনে কাউন্সিলররা যারা মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন তাদের কেউ মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলের নাম প্রস্তাব করেননি। তবে মঞ্চের বিপরীত থেকে ফখরুলের সমর্থনে অভূতপূর্ব স্লোগান লক্ষ্য করা গেছে। পার হয়ে গেল সপ্তাহ, এখনো ঘোষণা হয়নি।
বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে বলে থাকেন, দলটিতে একমাত্র খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান অপরিহার্য। নেতাকর্মীরা এ দুজনের প্রতি তাদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করে। ফলে বিএনপিতে এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা মাত্র দুই জনের। এ দুজনের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পর্ক নয় রয়েছে মাতৃত্বের সম্পর্ক। তাই মহাসচিব পদে নাম ঘোষণা যত বিলম্ব হচ্ছে নেতাকর্মীদের মনে তত প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। তাহলে কী ফখরুলের বিরোধিরা সফল হচ্ছেন? নাকি ফখরুল নিয়ে কোনো গোপন তথ্য আছে শীর্ষ দুই নেতার কাছে? ফখরুল ‘অবিচারের’ শিকার হচ্ছে না তো? ফখরুলকে নিয়ে কৌতুহল তৈরি হওয়ার পাশাপাশি মহাসচিব পদে ফখরুলের বিকল্প হিসেবে দলের নীচের সারির নেতারা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কথাও চিন্তা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘অধিবেশনে কাউন্সিলররা চেয়ারপারসনকে বলেছেন, ম্যাডাম বেঈমানদের চিনতে পেছনে তাকাতে হবে না। আপনার আশে পাশে তাকান বেঈমান দেখতে পাবেন। ম্যাডামও বলেছেন, শুধু কেন্দ্রের দোষ দিলে হবে না। তৃণমুলকেও সজাগ থাকতে হবে। ম্যাডামের আশপাশে অর্থাৎ নীতি নির্ধারণী পর্যায় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেই বেঈমান রয়েছে। কিন্তু এসব পদে চট্টগ্রামের যারা রয়েছেন তারা পরিক্ষীত।’
অপর এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা পাঠ করেন। চট্টগ্রাম লাল দিঘি ময়দান বিএনপির রাজনীতির জন্য এক প্রকার তীর্থ ভূমি। জাতীয়তাবাদী দলের জনককে (জিয়া) চট্টগ্রামেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের নেতারা যারা বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের রয়েছেন তারা খাঁটি সোনার মতো নির্ভেজাল। চট্টগ্রামের নেতারা দলে দাতা হিসেবেও পরিচিত। গ্লোবাল পলিটিক্সে বিএনপিকে শাক্তিশালী হতে হলে চট্টগ্রামকে প্রাধান্য দিতে হবে। চট্টগ্রামে বেশ কয়েকজন জাতীয় নেতা থাকলেও এই মুহূর্তে আমির খসরু মহামুদ চৌধুরী মহাসচিব হিসেবে উপযুক্ত।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নিয়ে বলা হচ্ছে, তার সেরকম রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কমিউনিটিভিত্তিক রাজনীতিতে তিনি বেশ এগিয়ে রয়েছেন।
বিশেষ করে ব্যবসায়িক নেতা হিসেবে তার বেশ প্রভাব এবং সুনাম রয়েছে। দেশ-বিদেশের কূটনৈতিক পাড়ায় তার বেশ খাইখাতির রয়েছে। গণমাধ্যমে তার বিষয় ভিত্তিক বক্তব্যের চাহিদা রয়েছে। পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশে বিদেশে সমাদৃত। সর্বোপরি বর্তমান বিএনপিতে যে দুজন অপরিহার্য তাদেরও আস্থাভাজন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আরেক নেতা জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব করা না হলে অনেক নেতাকর্মী তাদের মনোবল হারাবে।
বিষয়টি নিয়ে এক মধ্যমসারির নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-আওয়ামী লীগের মতো দলগুলোতে হাসিনা-খালেদার বলয়ের বাইরে যাওয়া মানে মূলধারার রাজনীতি থেকে ছিঁটকে পড়ে যাওয়া। রাজনীতি দৈনিক পত্রিকা নয়, এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেমন পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষা করে। এক ধরনের যন্ত্রণায় ভোগে তখন নানা ধরনের চিন্তা আসতেই পারে। রাজনৈতিক দলে এক ইস্যু নিয়ে একশ মত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’
কবে নাগাদ বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটি ঘোষণা হবে জানতে চাইলে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি কি তা জানি? কাউন্সিলে ম্যাডামের প্রতি আমরা আস্থা রেখেছি। ম্যাডাম সময় মতো দিবেন। তবে আশা করছি দ্রুত স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করবেন।’
কাউন্সিলের পরে মহাসচিব পদে আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে মোশাররফরে দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। ম্যাডামের প্রতি আমরা আস্থা রেখেছি। ম্যাডাম যাকে দেবেন তিনিই কাউন্সিলে নির্বাচিত বিবেচিত হবেন।’