গান গাইতে গাইতেই মারা গেলেন কঙ্গোর পাপা উয়েম্বা
ঢাকা: গান গাইতে গাইতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন কঙ্গোর সেলিব্রেটি সঙ্গীতশিল্পী পাপা উয়েম্বা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি গোটা বিশ্বে ‘কিং অব কঙ্গোলেস রুম্বা’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
শনিবার আইভরি কস্টের আবিদজান শহরে একদল নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে এক স্টেজ শোতে অংশ নিচ্ছিলেন পাপা ওয়াম্বা। তিনি গান গাইছেন। তাকে ঘিরে নাচছে একদল পারফর্মার। এ সময় হঠাৎ করেই সংজ্ঞাহীন হয়ে স্টেজে ঢলে পড়েন জনপ্রিয় ওই গায়ক। হাসপাতালে নেয়ার আগেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি।
তার মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কঙ্গোর সংস্কৃতিমন্ত্রী বাউদুইন বানজা মুকালে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তার মৃত্যুতে কঙ্গো ও সমগ্র আফ্রিকার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
ওয়েম্বার জন্ম ১৯৪৯ সালে। তার প্রকৃত নাম শুনগু উয়েম্বাদিও পেনে কিকুম্বা। প্রথম জীবনে তিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। পরে তিনি আধুনিক গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কঙ্গোর রুম্বা সঙ্গীতের আধুনিকায়নে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি গোটা আফ্রিকা ও ফরাসি ভাষাভাষী সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে ফ্রান্সে বসবাস শুরু করেছিলেন। পিটার গাব্রিয়েল ও স্টেভি ওন্ডারের মত মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করার ফলে পাশ্চিমা বিশ্বেও তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল।
তবে তার জীবনে কিছু অন্ধকার দিকও রয়েছে। ২০০৪ সালে মানব পাচারের দায়ে তিনি ফরাসি আদালতে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এ অপরাধে তিন মাস জেল খেটেছেন। ওই একই অপরাধে ২০১২ সালে বেলজিয়ামের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১৫ মাস জেল খাটেন। মোটা অঙ্কের জরিমানাও তিনি হয়েছিল তাকে।
এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গোটা আফ্রিকা মহাদেশে তার জুড়ি মেলা ভার। এই অঙ্গনে তিনি ছিলেন এক ও অদ্বিতীয়। আজীবন সঙ্গীত সাধানায় মগ্ন থাকার ব্রতী নিয়েছিলেন এই শিল্পী। তিনি চাইতেন, গান গাওয়া অবস্থাতেই যেন তার মৃত্যু হয়। সৃষ্টিকর্তা তার সেই প্রার্থণা কবুল করেছেন। সঙ্গীত পরিবেশনের সময়ই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এ সম্পর্কে সালিফ ট্রাওরে নামের এক সঙ্গীতশিল্পী বলেছেন,‘পাপা উয়েম্বা স্টেজেই মরতে চাইতেন সবসময়। মাত্র দু সপ্তাহ আগেই আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় তিনি একই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।’
পৃথিবীর মায়া ছেড়ে বিদায় নিলেও আফ্রিকার সঙ্গীতাঙ্গনে তার নাম দীর্ঘদিন ধরে উচ্চারিত হবে। আগামী ৫০ বছর নয়, তার গান আরো ১শ বছর ধরে শুনবে আফ্রিকার সঙ্গীতপ্রেমীরা।