জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং ঘোষণা, স্থান নেই চাঁদপুরের
চাঁদপুর: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা র্যাংকিংয়ে চাঁদপুর জেলার কোনো কলেজ নেই। এমনকি চাঁদপুর শহরে অবস্থিত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাসী দু’টি সরকারি কলেজও ওই র্যাংকিংয়ে স্থান পায়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কিন্তু চাঁদপুরের শিক্ষাবিদরা বর্তমান কলেজ পরিচালনাকারীদের ত্রুটি বলে জানিয়েছেন।
উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগতমানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের স্থান হয়নি। গত ১২ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭১তম সিন্ডিকেট সভায় প্রথমবারের মতো দেশের ৬৬৫টি স্নাতক (সম্মান) কলেজের র্যাংকিংয়ের ফলাফল নির্ধারণ করে। যা গত ১৫ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ৫টি কলেজে ও বিভাগীয় পর্যায়ে ১০টি করে প্রতিষ্ঠানকে সেরা ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত র্যাংকিংয়ের তালিকানুযায়ী ৬৫ দশমিক ৩৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে রাজশাহী কলেজ। মাত্র ৬ দশমিক ৭৭ স্কোর নিয়ে সর্বনিম্ন স্থান অর্জন করে রাজশাহীর দাওকান্দি (বেসরকারি) কলেজ। ৬৬৫টি কলেজের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানদণ্ডের বিচারে ১৫১টি কলেজকে র্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হয়। বাকি কলেজগুলো ক্যাটাগরিতে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তালিকায় স্থান পায়নি বলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ৬৬৫টি স্নাতক (সম্মান) কলেজের মধ্যে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজসহ এ জেলার একটি কলেজও স্থান না পাওয়ায় সর্বমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফলে জেলার শীর্ষ বিদ্যাপীঠ হিসেবে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কলেজের ছাত্র-শিক্ষকসহ সবার মাঝে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে।
তবে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হেসেন জানান, র্যাংকিংয়ে স্থান না পাওয়া দুঃখজনক। তবে র্যাংকিংয়ের জন্য অনলাইনে যখন ডাটাবেজ সংগ্রহ করা হয় তখন তারা তথ্য-উপাত্ত প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। কারণ হিসেবে অধ্যক্ষের দাবি অনলাইনে তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টি নজরে আসেনি।
অপরদিকে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ মতিন মিয়া বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে র্যাংকিংয়ে অংশগ্রহণ করেও তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম আসেনি। তবে অধ্যক্ষের দাবি তার কলেজ ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স থাকায় হয়ত বড় বড় কলেজের সাথে প্রতিযোগিতায় আসা সম্ভব হয়নি।
র্যাংকিংয়ে স্থান না পাওয়ায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ (চাঁসকের) শিক্ষার্থীদের দাবি কলেজ শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রতিটি বিভাগে অতি বাণিজ্যমুখী হওয়ার কারণেই এ বিপর্যয়ের কারণ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক সঙ্কটের কথা বলে শিক্ষকরা এখন ক্লাস ফাঁকিসহ বিভিন্ন খাতওয়ারি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেই ব্যস্ত সময় পার করছে।
পাশাপাশি অধিকাংশ শিক্ষকই কোচিং বাণিজ্যমুখী হয়ে পড়ছে। এসব কারণে কলেজের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে কারোই কোনো মাথাব্যথা নেই। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি সেশনজট কমাতে ক্র্যাশপ্রোগ্রাম চালু করায় শিক্ষকদের আর্থিক বাণিজ্য অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো বিভাগের ভর্তি, ফরমফিলাপ, রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষা চলমান থাকছে। ফলে শিক্ষকরা এখন কলেজকে নিয়ে ভাবার সময় পাচ্ছে না। তাই চাঁসকের শিক্ষার মান নিম্নমুখী হলেও তা পরিবর্তনে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত র্যাংকিংয়ে জাতীয় পর্যায়ে সেরা ৫টি প্রতিষ্ঠান হলো- রাজশাহী কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ ও বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ।
আঞ্চলিকে চট্টগ্রাম বিভাগে সেরা ১০টি কলেজ হচ্ছে : চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, ফেনী সরকারি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম হাজি সরকারি মহসিন কলেজ, পটিয়া সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম ওমর গনি এমইএস (বেসরকারি) কলেজ।
র্যাংকিংয়ের আওতাভুক্ত জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কলেজগুলোকে ২০ মে ঢাকা জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে সম্মাননা স্মারক, সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের অধিভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি কলেজের মাঝে প্রথমবারের মতো ৬৬৫টি স্নাতক (সম্মান) কলেজের মাঝে ৩১টি Key Performance Indicator (KPI) শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হওয়ায় ১৫১টি কলেজকে তালিকাভূক্ত করে। যার মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বেসরকারিভাবে পরিচালিত। ৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টিম র্যাংকিংয়ের এ তালিকা প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে র্যাংকিং তালিকা প্রকাশ করে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নির্ধারণে ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিমের আহ্বায়ক ছিলেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভিসি প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর। সদস্যরা হলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন (স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গভেষণা) প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. নূরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. এম সেকান্দর হায়াত খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ড. মো. হারুনুর রশিদ খান।