শিক্ষামন্ত্রীকে এতোটা রাগতে দেখেনি কেউ
ঢাকা: বেতন বাড়ানোর পরও জাতীয়করণের দাবি তোলায় শিক্ষকদের প্রতি রেগে গিয়ে ডায়াসেই ক্ষোভ ঝাড়লেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এক পর্যায়ে রেগে অগ্নীশর্মা হয়ে ডায়াস ছেড়েই চলে যান তিনি।
রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ৩১৫টি স্কুলে আইসিটি ল্যাব ও মাল্টি মিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপনের জন্য ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
মন্ত্রী বলেন, উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোকে আমরা মডেল স্কুল প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত করেছি। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আজকে মালটিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য ল্যাপটপ বিতরণ করা হচ্ছে।
শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আগামী পাঁচ বছরে আপনাদের বেতন লাখ টাকা ছাড়াবে। আর কী চাই আপনাদের? এ সুযোগে উপস্থিত ৩১০টি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা জাতীয়করণের জন্য সমস্বরে দাবি জানান। এর আগে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার। বক্তব্যের শেষে তিনিও জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছিলেন।
তখন মন্ত্রী বলেন, আপনাদের আগে বলেছি সবুরে মেওয়া ফলে। উপজেলায় আরো স্কুল আছে। আপনাদের স্কুলকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এতো এতো সুবিধা দেয়া হয়েছে। আপনারা তার জন্য কোনো কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে উল্টো আবার দাবি জানাচ্ছেন।
মন্ত্রী রেগে আগুন হয়ে বলেন, আপনারা যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবেন, নিজের দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকার করবেন, তা না করে আপনারা দাবি জানাচ্ছেন।
এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না মন্ত্রী। কঠোর বাক্যে বললেন, জাতীয়করণ হবে তবে আপনাদেরকে বাদ দিয়ে অন্য স্কুলকে জাতীয়করণ করা হবে। আমি আর কী বলবো? আমার মানসিকতাই খারাপ করে দিয়েছেন আপনারা। আমার কিছু বলার নেই। এই বলতে বলতে ডায়াস ছেড়ে চলে যান।
মন্ত্রীর এমন অগ্নিমূর্তি দেখে শিক্ষকরা তখন হাতজোড় করে ক্ষমা চান। এরপর সভাপতির বক্তব্য রাখেন মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
মাউশি মহাপরিচালকের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর শিক্ষকদের হাতে ৩১০টি ল্যাপটপ তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। ৩১৫টি স্কুলে ল্যাপটপ দেয়ার কথা থাকলেও আইনি জটিলতার কারণে ৫টির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা যায়নি।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক কেএম রফিকুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. জিনাত ইমতিয়াজ আলী, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান।
উল্লেখ্য, ৩১৫টি উপজেলার সর্বশ্রেষ্ট স্কুলগুলোকে নিয়ে মডেল স্কুল প্রকল্প হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি স্কুলে চার তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে। স্কুলগুলোতে ২২টি কম্পিউটার সংবলিত একটি করে আইসিটি ল্যাব।, ৭টি মালটিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং এসব ক্লাসরুমের জন্য ৭টি ল্যাপটপ ৭টি প্রজেক্টর ৭টি মোডেম দেয়া হবে।
সবমিলিয়ে একটি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব কিছুই বিদ্যালয়গুলোতে থাকবে বলে মাউশির মহাপরিচালক তার বক্তব্যে জানিয়েছেন। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি ৮৮ লাথ ৭৪ হাজার টাকা।