ট্রেনের টিকেট পেতে রাতভর অপেক্ষা
ঢাকা: ‘স্টেশনে এসেছি শনিবার বিকেল ৩টায়। ইফতার সেহরি এখানেই পাশের একটি হোটেলে করেছি। সন্ধ্যায় আমার মেয়েও এসেছে। পালাবদল করে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি। শুনছি টিকিট ছাড়বে সকাল ৮টায় (রোববার)। কষ্ট হচ্ছে। এখানে প্রচণ্ড গরম আর প্রচুর মানুষের ভিড়। শান্তিতে বসে থাকারও সুযোগ নেই। একটু পরপরই সিরিয়াল নিয়ে ধাক্কাধাক্কি। হই হুল্লুড় চারদিকে। কষ্ট হলে কী হবে। টিকিট না পেলে তো বাড়ি যাওয়া হবে না। তাই শত কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। টিকিট কাটতে হবে।’
কমলাপুর রেল স্টেশনে শনিবার (২৫ জুন) রাতে এভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের টিকিট প্রত্যাশী পারভীন চৌধুরী।
গল্পটা শুধু পারভীন চৌধুরীর নয়। এমনই অভিজ্ঞতা ৪ জুলাইয়ের টিকিটের জন্য আসা হাজারো টিকিট প্রত্যাশীর।
স্টেশনের কাউন্টারগুলোর সামনে পেপার বিছিয়ে বসে আছেন অনেক। দলে দলে চলছে আড্ডা। কেউ বসে কেউবা দাঁড়িয়ে। কেউ কেউ পেপার পড়ে সময় কাটাচ্ছেন। আবার এদের অনেকে তাস খেলে অপেক্ষার প্রহর পার করছেন। কেউ আবার দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন স্টেশনের মেঝেতে।
ভোর ৪টায় হঠাৎ করেই চাঞ্চল্য ফিরে আসে টিকিট প্রত্যাশীদের মাঝে। শুয়ে বসে থাকা মানুষগুলো নিজ নিজ সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে যান। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। কার আগে কে সিরিয়ালে দাঁড়াবে। শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর হয়ে ওঠেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
গাইবান্ধার টিকিট নিতে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রাহাত মিনহাজ। তিনি বলেন, ‘সমস্যার কথা বইলা লাভ নাই ভাই। এইখানে এসেছি শনিবার (২৫ জুন) দুপুর আড়াইটায়। একটু সরে গেলেই সিরিয়াল মিস। ধাক্কাধাক্কিতো আছেই। ছিলাম সবার সামনে। ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসছে মাঝখানে। এখন টিকিট পাইলেই হয়।’ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সব টিকিট ছাড়লে আর কালোবাজারিদের হাতে টিকিট না গেলে বাড়ি ফেরার টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
টিকিট প্রত্যাশীদের কয়েকজনকে খাতা নিয়ে নিজেদের সিরিয়াল লিপিবদ্ধ করতে দেখা গেছে কয়েক জায়গায়। কে কত নম্বর সিরিয়ালে আছেন সেটা খাতায় তোলা হচ্ছে। পরে সেই সিরিয়াল অনুসারে লাইনে দাঁড়াতে হবে। যাতে সিরিয়াল নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয় সেজন্যই এই ব্যবস্থা। কিন্তু এখানেও বিপত্তি। ১৫ নম্বর কাউন্টারের সামনে কথা হয় রাজশাহীর টিকিট প্রত্যাশী মঞ্জু মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি সিরিয়ালে নাম লেখাইছি দুইবার। টিকিট নিতে যারা আইছে তাদেরই কয়েকজন সিরিয়াল করতাছে। প্রথমবার আমার সিরিয়াল আছিল ১৩। তখন এই সিরিয়াল নিয়ে দুই গ্রুপ হয়ে যায়। ফলে আবার নতুন করে নাম লেখাতে হয়। এখন আমার নম্বর ৩৭। এটাও কতক্ষণ থাকে জানি না। শেষমেষ টিকিট পাইলেই হলো।’
রেলওয়ে পুলিশের তথ্যকেন্দ্রে কথা হয় কনস্টেবল মো. আবু রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গুরুতর কোনো ঝামেলা হয়নি। টুকটাক ধাক্কাধাক্কি হয়। এগুলো আনসারদের সঙ্গে নিয়ে রেলওয়ে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করছে। আর তেমন কোনো সমস্যা নাই।
অন্য আরেকজন রেলওয়ে পুলিশ সদস্য মো. উজ্জল বলেন, ‘প্রতিটা লাইনে আমাদের দুইজন করে সদস্য আছে। লাইনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে ওরা ঠিক করে নিচ্ছে।’
উল্লেখ্য, শনিবার নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা’ উদ্বোধনের কারণে ৪ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকে। একদিন বন্ধ থাকার পর ২৬ জুন বিক্রি হবে ৪ জুলাইয়ের টিকেট। ২৭ জুন কাউন্টারগুলোতে ৫ জুলাইয়ের টিকেট পাওয়া যাবে।