স্বর্ণপাচার মামলা : তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ছাড়াই রায় কাল

2016_07_13_11_56_15_5r3B3FxY47lsJ0awmP7OaGuetvrIiy_original

ঢাকা : প্রায় চব্বিশ কেজি স্বর্ণ পাচারের একটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়াই আগামীকাল বৃহস্পতিবার রায় হতে যাচ্ছে।

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এস এম জিয়াউর রহমান গত ১২ জুন মামলাটিতে যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

মামলাটিতে দুই জন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেন। এরা হলেন— পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম এবং সিআইডি পুলিশের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (অব.) মুন্সি আতিকুর রহমান। এদের মধ্যে মুন্সি আতিকুর রহমান সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করে ২০০৩ সালের ৩ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। সে হিসেবে তিনিই মামলার প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তার সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়াই মামলাটিতে রায় ঘোষণা হলে বড় ধরনের ত্রুটি থেকে যাবে এবং আসামিরা এ কারণে খালাসও পেতে পারেন বলে মামলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ১০ অক্টোবর রাজধানীর নাখালপাড়ার লুকাস মোড়ে চেকপোস্টে সমীর মজুমদার ও ইসহাক ওরফে ইসমাইলের দেহ তল্লাশিকালে তাদের কোমরে বাঁধা অবস্থায় ১২০টি করে ২৪০টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় আর্মড পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নান্নান মিয়া রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ৪৭(১০)২০০২ নম্বর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি ধারায় মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্তকালে আসামি সমীর স্বর্ণ বার অবৈধভাবে পাচারের কথা স্বীকার করে ২০০২ সালের ২০ অক্টোবর আদালতে জবানবন্দি দেন। এ আসামির জবানবন্দিতে আরও ৭ জনের নাম উঠে আসে।

মামলাটি তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ৩ জুন সিআইডি পুলিশের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ২ জনকে আসামি করে ৬ জনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। তবে আদালত মো. মোখলেছুর রহমনকে অব্যাহতি দিয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।

আমলে নেয়া আসামিরা হলেন— সমীর মজুমদার, ইসহাক ওরফে ইসমাইল, জহিরুল হক, মো. সেলিম, আব্দুল ওহাব তালুকদার, হুমায়ুন কবির ও আব্দুল মালেক।

আসামিদের মধ্যে সমীর ও জহিরুল পলাতক, ইসহাক জেলহাজতে এবং অপর আসামিরা জামিনে আছেন।

মামলাটিতে মোট ১৩ জন সাক্ষী রয়েছে। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৫ জুন পর্যন্ত ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। তবে এদের মধ্যে মামলার প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা মুন্সি আতিকুর রহমানকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজিরা করা হয়নি। আদালত থেকে বারবার তার বিরুদ্ধে সমন ও ওয়ারেন্ট দেয়া হলেও তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেনি।

মামলার এই তদন্ত কর্মকর্তা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি। মামলাটিতে তিনি জামিনে থেকে প্রত্যেক ধার্য তারিখে হাজিরা দিচ্ছেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ মামলায় পুলিশ এ সাক্ষীকে হাজির করেনি। এ ছাড়া এ সাক্ষীকে হাজির না করায় বিষয়ে কোনো প্রকার পুলিশ প্রতিবেদন ছাড়াই সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করে রায়ের জন্য নেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য না নিয়ে রায় ঘোষণায় আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে তদন্ত কর্মকতা সাক্ষ্য না দিলে রাষ্ট্রপক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হয়। আসামিপক্ষ সেই ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী সুবিধা চাইতে পারেন।’

এই সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষী মুন্সি আতিক মুঠোফোনে বাংলামেইলকে বলেন, ‘মাঝে কিছু দিন আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। এ ধরনের কোনো মামলায় সমন এসেছে কি না, তা আমার জানা নাই। এখন আমি সুস্থ, তাই সমন পেলে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর জানান, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ছাড়া মামলাটি রায়ের জন্য নেয়ার বিরোধিতা আমরা করেছি। কিন্তু আদালত শোনেননি।’

মন্তব্য