এমপিওভুক্তি নিয়ে সংসদে ক্ষোভ, প্রশ্নবান শিক্ষামন্ত্রীর দিকে

2015_09_07_19_17_47_fn3evDF9gojtwceRt2FoKnVhQZNTdM_original

সংসদ ভবন থেকে : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে আবারো সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে কবে, কিভাবে এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হবে তা জানতে শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেন তারা।

জবাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমার কোন জবাব নেই। তবে, বিকল্পের অপেক্ষায় আছি। দ্রুতই এ প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করি।’

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরকারি দলের সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন দিবো, সাবজেক্ট খোলার অনুমোদন দিবো, নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম মনিটরিং করবো, কিন্তু এমপিওভুক্ত করবো না- এটা হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত না করতে পারলে নিবন্ধন বন্ধ রাখেন। অনার্স-ডিগ্রি খোলার অনুমতি দিবেন না। এ বিষয়ে সরকার কি ভাবছে তা জানতে চান তিনি।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি সংসদ সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে শতভাগ একমত। কিন্তু এ বিষয়ে আমার কাছে জবাব নেই। আমি বেতন দিতে পারবো না, অথচ অনুমোদন দিবো। এটা আমিও চাই না। কিন্তু তারপরও সংসদ সদস্যদের চাপের মুখে অনুমোদন দিতে হয়।

তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য চেষ্টা চলছে। কোথা থেকে অর্থ পাওয়া যায়- এ বিষয়ে নানা বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই কোনো একটা সমাধান আসবে বলে আশা করি। এর আগে একই বিষয়ে সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপন করেন সরকার দলীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিক ও মনিরুল ইসলাম।

তাদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা চলছে। সরকারের কাছে নানাভাবে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। অর্থের অপেক্ষায় আছি। অর্থ পেলেই এমপিওভুক্তি শুরু হবে।

তিনি আরো বলেন, এমপিওভুক্ত না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ হবে না, এটা ঠিক নয়। এমপিও’র সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কোন সম্পর্ক নেই। এমপিদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি নিয়ে লিখিত প্রশ্ন উত্থাপন করেন সরকারি দলের সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, বেগম সেলিনা আখতার বানু, আলী আজম, বেগম আখতার জাহান, বেগম নূর জাহান বেগম, নবী নেওয়াজ, বেগম জেবুন্নেসা আফরোজা ও মোর্শেদ আলম এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম ও তরিকত ফেডারেশনের এম এ আওয়াল।

তাদের প্রশ্নের জবাবে অনেকটা অভিন্ন জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। মহাজোট সরকারের বিগত মেয়াদে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি নির্দেশিকা সংশোধন করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন ও অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর এমপিওভুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে নূরুল ইসলাম নাহিদ জানান, দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদক ও তামাকের অপব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে মনিটারিং করার জন্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি আছে।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না, এটা ঠিক। তবে কলেজগুলোতে হয় না, এটা পুরোপুরি ঠিক না। ইতোমধ্যে অনেক কলেজেই নির্বাচন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের বিনিয়োগ শতভাগ, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ শূন্য। তাই আমরা তাদেরকে উৎসাহিত করতে পারি, কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারি না। তবে সুস্থ্য গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য