ঢাকা কারাগারে হচ্ছে বিনোদনকেন্দ্র, থাকছে যাদুঘর
ঢাকা : নাজিমউদ্দিন সড়কের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের থাকছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর।
শুক্রবার কারা সদর দপ্তরের কারা মহা পরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখান উদ্দিন জানান, অপসারিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে চার স্তরের বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পার্ক, কনভেনশন সেন্টার, উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চের পাশাপাশি দুটি জাদুঘর করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক কিছুই হবে। ভেতরে দুটি মিউজিয়াম এবং নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। সেই ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ করার পাশাপাশি একটি নতুন নকশায় বিনোদনের স্থান তৈরি করা হবে।’ এর বাইরে কনভেনশন সেন্টার, কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং কিছু উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরকে জাতীয় জাদুঘরের শাখা জাদুঘর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে একই বছরের ২৮ নভেম্বর স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-২ অধিশাখা থেকে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার স্মৃতি জাদুঘরকে জাতীয় জাদুঘরের শাখা হিসেবে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুসারে জাদুঘর দুটিকে জাতীয় জাদুঘরের অন্তর্ভুক্তি করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘরে যা থাকছে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্যবার কারাবরণ করেছেন। দীর্ঘ কারাজীবনে যেসব সেলে আটক ছিলেন, সেগুলোকে বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘরে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছ। এছাড়া রয়েছে বঙ্গবন্ধুর গোসলখানা ও রান্নাঘরের কিছু অংশ।
জাদুঘরে আরও থাকছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাবার প্লেট, বিছানাপত্র, চেয়ার-টেবিলসহ নানা জিনিসপত্র। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ছাড়াও ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার ও হাড়ি-পাতিল।
কারাগারের ভেতরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো কামিনী ও সফেদা গাছ। এছাড়া ছয় দফার স্মৃতি রক্ষার্থে বানানো হয়েছে বকুল চত্বর।
যা থাকছে চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরে : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাতে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়।
কারাগারের যে সেলে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়, সেখানে তৈরি করা হয়েছে জাদুঘর। এ জাদুঘরে জাতীয় চার নেতার কারাগার জীবনে ব্যবহৃত প্রায় সব কিছুই সংরক্ষণ করা হয়। জাতীয় চার নেতার জেলজীবন ও হত্যার সময়ের স্মৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেখানে।
উল্লেখ্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ১৭৮৮ সালে ৩৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা দুর্গের ভেতরে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তথা কারা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে বেশ কয়েকটি বড় আবাসিক ভবন গড়ে ওঠায় এর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা উভয়ই বিঘ্নিত হচ্ছে বলে উপলব্ধি করে সরকার। এরপর ১৯৯৪ সালে কারাগারটি সরিয়ে নিয়ে দুটি কারাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে একটি গাজীপুরের কাশিমপুরে ও অন্যটি কেরানীগঞ্জে।
অবশেষে ২০০৬ সালে একনেকে কেরানীগঞ্জে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। আর বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু পরে তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৭ সাল পর্যন্ত। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে সাড়ে চার হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতার নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১৯৪ একর জায়গার ওপর ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম এ কারাগারটি।
কেরানীগঞ্জে বন্দীদের স্থানান্তরের পর পুরোনো কারাগারকে চারস্তরের বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তর করার পরিকল্পনার কথা জানান কারা মহাপরিদর্শক।