পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ নানি-নাতিন, প্রশাসন নির্বিকার

manik-gonj_123955

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটের চর-শিবালয় এলাকায় কে-১৬ নামের স্পিডবোট ডুবিতে পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ রিজিয়া বেগম (৩৫) ও তার নাতিন শ্রাবন্তী (৬)।  তাদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা নেই প্রশাসনের।

স্পিডবোট ডুবির শুরু থেকে বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে অবৈধভাবে চলাচল করা স্পিডবোট মালিকরা। শিবালয় থানার ওসি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে এই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে  সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করার।

অবশেষে গত শনিবার শিবালয় থানায় স্পিডবোট চালক আলাউদ্দীনকে আসামি করে মামলা করেছেন রিজিয়া বেগমের স্বামী সাভারের সবজি ব্যবসায়ী ইদ্রিস জমাদ্দার। নিখোঁজ দুজনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার বড় ডালিমা গ্রামে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে রিজিয়া বেগম তার মেয়ের ঘরের নাতিন শ্রাবন্তীকে নিয়ে পাবনার কাশিনাথপুর যাচ্ছিলেন। তাদের নিয়ে ওই স্পিডবোটে মোট ১২ জন যাত্রী ছিল। শিবালয় উপজেলার চর-শিবালয় এলাকায় পৌঁছালে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি উল্টে যায়। এ সময় স্পিডবোট থেকে ছিটকে পড়া ছয় বছরের শিশু শ্রাবন্তী উদ্ধার করতে যান তার নানি রিজিয়া বেগম। পরে যমুনা নদীর তীব্র ¯্রােতে দুজনই নিখোঁজ হন।

স্পিডবোট ডুবির এ ঘটনা নিয়ে লুকোছাপার অভিযোগ উঠেছে শিবালয় থানার ওসি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। দুর্ঘটনার বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এককে সময় একে তথ্য দিয়ে তাদের বিভ্যান্ত করেন। সর্বশেষ তিনি দায়িত্ব নিয়ে বলেন ওই স্পিডবোটে  মোট ১০ জন যাত্রী ছিল, যাদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্পিডবোট ডুবির ঘটনাটি তার ঊর্র্ধ্বতন কাউকে জানাননি ওসি মনিরুল। এমনকি ওয়ারলেস বার্তাও পাঠাননি। নিয়ম অনুযায়ী নৌডুবির ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মাইকিং ও ডুবুরিদল দিয়ে তল্লাশি চালানোর কথা থাকলেও তার কিছুই করেননি তিনি। বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি তৎপরতা চালান। অন্যদিকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার দিন স্পিডবোট চালককে থানায় ধরে নিয়ে গেলেও স্পিডবোট মালিক সমিতির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যমুনায় স্পিডবোট ডুবে নানি-নাতিন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হলে পরের দিন বুধবার ওই পুলিশ কর্মকর্তা দায়সারা গোছের কার্যক্রম হাতে নেন। ঘটনার চার দিন পর গত শনিবার স্পিডবোটের চালক মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার দক্ষিণ মেদীনিগঞ্জ এলাকার মৃত হান্নান বেপারীর ছেলে আলাউদ্দীন ব্যাপারীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় বাদী করা হয় নিখোঁজ রিজিয়া বেগমের স্বামী ইদ্রিস জমাদ্দারকে। মামলার মূল আসামি আলাউদ্দীন ব্যাপারী এখন পলাতক।

রিজিয়া বেগমের স্বামী ইদ্রিস জমাদ্দার বলেন, গত মঙ্গলবার তার দ্বিতীয় স্ত্রী রিজিয়া বেগম ও মেয়ের ঘরের নাতিন শ্রাবন্তীকে দুপুর দেড়টার দিকে আরিচা ৪ নম্বর ঘাটে স্পিডবোটে তুলে দেন। কিন্তু পরদিন সকাল পর্যন্ত তারা মেয়ের বাড়ি না পৌঁছালে তিনি আরিচা ঘাটে এবং মেয়ের স্বামী আজাদ হোসেন কাজিরহাট ঘাটে খুঁজতে থাকেন। পরে তারা জানতে পারেন নদীতে স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় তারা নিখোঁজ হয়েছেন।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, রিজিয়ার স্বামী ইদ্রিস মিয়া বিষয়টি নিয়ে প্রথমে মামলা করতে চাননি। এ কারণে অভিযোগ আমলে নিতে বিলম্ব হয়েছে। তিনি বলেন, স্পিডবোট দুর্ঘটনার সংবাদ জানার পরপরই তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তবে ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়েছেন দুর্ঘটনার পরদিন। এই ঘটনায় এলাকায় মাইকিং করা হয়নি বলে জানান তিনি।

তবে ঘিওর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ারম্যান সৈয়দ আশরাফ জানান, এ বিষয়ে তাদের কেউ অবগত  করেনি।

মন্তব্য