র্যাব কর্তাসহ সাতজনের মামলা বাতিলের রিট প্রত্যাহার
আসামিরা রিট চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় চট্টগ্রামের তালসরা দরবার শরিফের টাকা লুটের ঘটনায় র্যাবের চার কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা চলতে আর বাধা নেই। আসামিদের অপারগতার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের মামলা বাতিলের রিট আবেদন খারিজ করে দেয়ায় এই বাধা দূর হলো।
বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন। ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর তালসরা দরবার শরিফে তল্লাশির সময় র্যাবের সদস্যরা দুই কোটি সাত হাজার টাকা লুট করেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়।
আসামিপক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। দরবার শরীফের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মাদ এনাম, মোহাম্মাদ মামুন, অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রবিউল আলম সৈকত।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে জানান, “মামলাটি পরিচালনার যথেষ্ট উপাদান না থাকায় আমার মক্কেলরা এ মামলা চালাতে অপারগ।”
এরপর আদালত মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না মর্মে জারি করা রুলটি নিষ্পত্তি করেন এবং সাত আসামির মামলা বাতিলের আবেদনটি খারিজ করে দেন।
দরবার শরিফের পক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, আসামিপক্ষ তাদের মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করায় আদালত রুলটি নিষ্পত্তি করে দেন। আদালতের এ আদেশের ফলে এখন মামলাটি বিচারিক আদালতে চলতে আর বাধা নেই।
মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, দরবার শরিফের টাকা লুটের ঘটনায় র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল (বরখাস্তকৃত) জুলফিকার আলী মজুমদারসহ মোট ১২ আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় একটি ডাকাতির মামলা করে দরবার শরিফ কর্তৃপক্ষ। এ মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল জুলফিকার আলীসহ অন্য সাত আসামি। দরবার শরিফের ঘটনার পর সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জুলফিকার আলী মজুমদারের পক্ষে ছিলেন বি এম ইলিয়াস কচি।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর র্যাবের একটি দল তালসরা দরবার শরিফে গিয়ে তল্লাশি চালায়। জুলফিকার আলী মজুমদারের নেতৃত্বে র্যাবের দলটি তল্লাশির সময় দরবার শরিফের আলমারি ভেঙে দুই কোটি সাত হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ ছাড়া ওই দিন দরবার শরিফ থেকে মিয়ানমারের পাঁচ নাগরিককে র্যাবের সদস্যরা আটক করে। তাদের থানায় হস্তান্তর করা হলেও টাকার বিষয়ে কোনো কিছুই উল্লেখ করেনি। পরে দরবার শরিফের পক্ষ থেকে বিষয়টি থানায় লিখিতভাবে জানানো হলেও কেউ সে সময় মামলা করতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
এ ঘটনা পরে জানাজানি হলে র্যাবের সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে টাকা লুটের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ আসার পর তাদের ফিরিয়ে নেয়া হয় নিজ নিজ বাহিনীতে। তাদের মধ্যে ছিলেন র্যাবের অধিনায়ক জুলফিকার আলী। পরে তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন তিনি।
আনোয়ারা থানার পরিদর্শক আব্দুস সামাদ ২০১২ সালে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন। সাত আসামির মধ্যে চারজন র্যাব-৭-এর সাবেক কর্মকর্তা, বাকি তিনজন এই বাহিনীর সোর্স।
চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদার ছাড়া অন্য ছয় আসামি হলেন র্যাব-৭-এর সাবেক কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শেখ মাহমুদুল হাসান, ডিএডি আবুল বাশার, এসআই তরুণ কুমার বসু, র্যাবের তিন সোর্স দিদারুল আলম ওরফে দিদার, আনোয়ার মিয়া ও মানব বড়ুয়া। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।