কোথায় ছিল নিখোঁজ ৪ শিশু?

2016_03_13_10_18_35_voosBhXuboUZGzb5YU33QUeMRFsxKY_original

সিলেট: শুক্রবার বেলা ২টা। জুমার নামাজ শেষে দুপুরের খাবার সম্পন্ন করে শায়েস্তাগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে ওই উপজেলার সুতাংবাজার এলাকার বাছিরগঞ্জ পূর্ব নোয়াগাও হাফিজিয়া মাদরাসার চার শিক্ষার্থী। শায়েস্তাগঞ্জ এসে তারা ট্রেনে করে সিলেট চলে আসে। পরে শনিবার সন্ধ্যায় তারা সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী একটি ট্রেনে করে শায়েস্তাগঞ্জ পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা বাসে করে নবীগঞ্জ উপজেলায় যায়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তবে সোহানুর নামের এক শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে। হবিগঞ্জ পুলিশ ও নিখোঁজ শিশুদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় নিখোঁজ হওয়া শিশু রাফিদের বাবা আহমদ রশিদ মনু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলামেইলকে জানান, তার ছেলে রাফিদকে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ তার কাছে হস্তান্তর করেছে। রাত ১টার দিকে হাসিমুখে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

নিখোঁজ হওয়া রাফিদ, ইমতিয়াজ ও নয়নের বরাত দিয়ে আহমদ রশিদ মনু মিয়া জানান, তারা পাজ্ঞাবি তৈরির জন্য গত শুক্রবার বিকালে মাদরাসা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ শহরে এসেছিল। কিন্তু সেখান খেকে রাফিদ, ইমতিয়াজ, নয়ন ও সোহানুর সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেনে করে তারা সিলেট যায়।

সেখানে গিয়ে তারা হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে অবস্থান করে এবং মাজার জিয়ারত করে। মাজার জিয়ারত শেষে তারা সেখানেই রাত্রী যাপন করে। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা মাজার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করে। এরপর সকালে পুরো মাজার ঘুরে দেখে ওই চার শিশু। কিন্তু হঠাৎ করে চারজনের মধ্যে সোহানুর তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যায়। সারাদিন সোহানুরকে খুঁজে তার সন্ধান পায়নি বাকি তিনজন।

অবশেষে তারা শনিবার বিকালে ফের সিলেট রেল স্টেশনে সোহানুর ছাড়াই অবস্থান করে। সেখান থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রেনে করে তারা শনিবার সন্ধ্যায় শায়েস্তাগঞ্জ পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তারা হবিঘঞ্জ এক্সপ্রেক্স (বিরতিহীন বাস) নামের একটি বাসে করে তারা হবিগঞ্জ শহরে পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা আরো একটি বাসে করে বানিয়াচং উপজেলার বালিখাল গ্রামে নয়নের ফুফুর বাড়িতে অবস্থান করে। পরে নয়নের ফুফুর বাড়ির লোকজন নয়নের স্বজনদের কাছে খবর দেন।

পরে নয়নের পরিবার বিষয়টি পুলিশ ও মাদরাসার শিক্ষকদের অবগত করেন। এরপর শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বানিয়াচং উপজেলার বালিখাল গ্রাম থেকে শায়েস্তাগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। পরে তাদের প্রথমে নবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসা করা হয় কিভাবে তারা নিখোঁজ হয়েছিলেন। এ সময় তারা তাদের নিখোঁজের বিষয়টি পুলিশের কাছে খুলে বলেন।

এদিকে, রাত দেড়টার দিকে শায়েস্তাগঞ্জ থার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বাংলামেইলকে বলেন, নিখোঁজ চার শিশুর মধ্যে তিনজনকে উদ্ধার করে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও নিখোঁজ থাকা বাকি আরেক জনকে উদ্ধার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

আমাদের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জাকারিয়া চৌধুরী জানান, শুক্রবার বিকালে মাদরাসা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ বাজারে আসে বাহুবল উপজেলার চারগাঁও গ্রামের আহমদ রশিদ মনু মিয়ার ছেলে রাফিদ (১৩), একই উপজেলার আব্দানারায়ন গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে ইমতিয়াজ (১২), হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ধরিয়াপুর গ্রামের আব্দুল আওয়ালের ছেলে সোহানুর (১১) ও নবীগঞ্জ উপজেলার সুজাপুর গ্রামের আব্দুল্লার ছেলে নয়ন (১২)। পাঞ্জাবি তৈরির কথা বলে মাদরাসা থেকে বের হলেও তারা আর মাদরাসায় ফিরে যায়নি।

পরে শুক্রবার রাতে শিশুদের পরিবারের সদস্যরা তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি। তাই শনিবার সকালে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করেন। এক পর্যায়ে নিখোঁজের সংবাদ পুরো জেলায় জড়িয়ে পড়ে। মানুষের মাঝে নেমে আসে উদ্বেগ আর আতঙ্ক।

এদিকে, শনিবার বিকেলে এ ঘটনায় শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৪১৫) দায়ের করেন নিখোঁজ শিশু রাফিদের বাবা বাহুবল উপজেলার চারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আহমদ রশিদ মনু মিয়া।

তবে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা থেকে ওই চার শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তারা লেখাপড়ার ভয়ে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টারা। তবে শিশুরা জিয়েছে তারা শাহজালাল মাজার জিয়ারত করতে সিলেট গিয়েছিল।

এদিকে, হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা শনিবার সকালে খবর পেয়ে নিখোঁজ শিশুদের পরিবার ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি তারা ৪ জন এক সাথে নিখোঁজ রয়েছে। এর পর থেকেই অভিযান শুরু করা হয়। পরে আমরা জানতে পারি তারা সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। তখন শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনের সিসি ক্যামের ফুটেজ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে সিলেটে আমাদের টিম পাঠিয়ে দেই। পরে জানতে পারলাম তারা নয়নের ফুফুর বাড়ি আছে। সেখান থেকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ধারণা করা যাচ্ছে লেখাপড়ার ভয়ে তারা স্বেচ্ছায় গিয়েছিল।

মন্তব্য