কাতারে অবহেলার শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা

2016_04_03_23_34_19_3KRIJhkgDUHfDNwIl6Knw3A3tIp542_original

ঢাকা : মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার বাংলাদেশের অন্যতম একটি শ্রমবাজার। বর্তমানে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রতিমাসে গড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কাতার যাচ্ছে। বাংলাদেশি শ্রমিকের সুনাম থাকা সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের কর্মীদের তুলনায় তারা অবহেলিত হচ্ছেন নানাভাবে। বেশি অভিবাসন ব্যয় ও কম মজুরি প্রদানসহ নানা প্রকার বৈষম্যমূলক ব্যবহার করছেন দেশটিসহ সেখানকার কম্পানিগুলো।

কাতারের দোহায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের পাঠানো এক চিঠিতে এসব অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে। এসব অবহেলিত ও বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করার জন্য করণীয় পদক্ষেপ নিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষরে চিঠিটি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা আছে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নির্মাণ শ্রমিক। তারা ভারত শ্রীলঙ্কা নেপাল ও পাকিস্তানের চাইতে শান্ত ও পরিশ্রমী। অথচ লেবার ক্যাম্প পরিদর্শনকালে লক্ষ্য করা যায়, বাংলাদেশি কর্মীকে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত ও দূতাবাসের ঘোষিত নিম্নতম মজুরির (১২০০ কাতারি রিয়াল) এর চেয়ে কম তথা ৮০০ রিয়াল গ্রহণে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কম্পানির ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না।

কাতারস্থ শ্রম আইনের ৩৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাতারে কর্মী নিয়োগের নিমিত্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রবাসী কর্মীর নিকট হতে কর্মী বাছাই, ভিসা প্রসেসিং অথবা অন্য কোনো নামে ফি গ্রহণ করতে কিংবা ভিসা কেনা-বেচা করতে পারবে না। এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশি কর্মীরা রিক্রুটিং অ্যাজেন্সির মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে কাতারে আসে। অথচ প্রতিবেশি দেশ নেপাল, ভারত ও শ্রীলঙ্কার কর্মীরা এর চাইতে অনেক স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কাতারের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছে।

এছাড়া কাতারের শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগকারী ও কর্মীর মধ্যে চাকরির চুক্তিপত্র থাকা বাধ্যতামূলক এবং চুক্তিপত্র ছাড়া প্রবাসী কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করা হয়না। কিন্তু বাস্তবতা হলো- কাতারে আসার পূর্বে বাংলাদেশি রিক্রুটিং অ্যাজেন্সির চুক্তিপত্র এবং কাতারে নিয়োগের পর সম্পাদিত চুক্তিপত্রে কোনো মিল থাকে না। তারা আসল চুক্তিপত্রের বাইরেও ওয়ার্ক পারমিট প্রদানসহ নানা রকম অবৈধ সুবিধা দিয়ে থাকে।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ এর ২২ নং অনুযায়ী এবং মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগের জন্য রিক্রুটিং অ্যাজেন্সি বা প্রতিষ্ঠান তাদের ডিমান্ড লেটারসমূহ সত্যায়নের জন্য দূতাবাসে জমা প্রদান দেয় না। যেমন- কাতারে মূলত গ্রুপ ভিসা ও একক ভিসার আওতায় শ্রমিক যায়। তবে ফ্রি ভিসার নামে একক ভিসায় অনেক বাংলাদেশি কর্মী কাতারে এসে নিয়োগ কর্তার মৌখিক সম্মতিতে নিজের ইচ্ছামাফিক কাজ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়টির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চিঠিটি আমরা দেখেছি। এ ব্যাপারে করণীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিলেই এসব বৈষম্য দূর করা সম্ভব। যেমন- যেহেতু রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিগুলো তাদের ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের জন্য দূতাবাসে জমা প্রদান করেন না, তাই দূতাবাস কর্তৃক চাকরির চুক্তিপত্রে শর্তাবলি যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয় না এবং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় না। তাছাড়া চুক্তিপত্র সঠিক না থাকায় কর্মীরা অধিকার রক্ষায় তাদের আইনগত সহায়তা দেয় সম্ভব হয় না দূতাবাসের পক্ষ থেকে।

তিনি জানান, ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন, ভিসা ও চুক্তিপত্র সত্যায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।  তাহলে প্রতি মাসে প্রতি মাসে অতিরিক্ত আরও ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলে জমা করা সম্ভব হবে। এছাড়া ন্যায্য মজুরি ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে পারলে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। কাতার থেকে প্রতিমাসে গড়ে ১০ হাজার কর্মী প্রায় ৯ থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবে। এতে কাতার থেকে প্রতি মাসে রেমিটেন্স এর পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা থেকে ৫০০ কোটি টাকা হবে।

এসব ছাড়াও ওই চিঠির বিপরীতে একই কম্পানিতে বারবার একক ভিসায় কর্মী প্রেরণের বিষয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের মনিটরিং জোরদার করারসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য