এমপির সামনে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠবস

2016_05_15_01_11_47_ZxvG1tfg5LCTVfOSF79Gir7auzAa6q_original

নারায়ণগঞ্জ : ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের সামনে জনসম্মুখে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। এরপর সেই শিক্ষককে পুলিশের কাছে হস্তান্তরও করা হয়।

একই সঙ্গে স্কুলের ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে বহিষ্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি সেলিম ওসমান।

গতকাল শুক্রবার (১৩ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যানন্দি এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এমপি নিজে উপস্থিত থেকে এস কর্মকাণ্ডের তদারকি করেন।

এলাকাবাসী জানান, গত ৮ মে সকালে স্কুলে আসার পর দশম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী স্কুলের ভেতরে একত্রে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এসময় প্রধান শিক্ষক তাদের মধ্যে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শাস্তি দেন। এসময় ওই শিক্ষক ছাত্রটিকে ‘ইবলিশ’ বলে গালি দেন এবং ধর্ম নিয়েও কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় এলাকা কয়েক হাজার নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে স্কুলের ভেতরে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিতরা তাকে গণপিটুনি দিয়ে জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বন্দর থানা পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল কালাম স্কুলের ভেতরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেন। এরমধ্যে স্কুলে এসে উপস্থিত হন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হাবিব, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম নুরুল আমিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, সহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং থানা পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ফাঁসি দাবি ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বহিষ্কার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকে।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে দুপুর আড়াইটায় বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে জানান। তখন এমপি মোবাইল ফোনে এলাকাবাসীকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের শান্ত থাকতে বলেন এবং তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। তখন এলাকাবাসী শান্ত হয়ে স্কুলের ভেতরে অবস্থান করতে থাকেন।

পরে বিকেল ৪টায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হোন সেলিম ওসমান। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনা জানতে চান।

সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্থানীয় প্রশাসন ও অভিযুক্তের সাথে কথা বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিয়ে স্কুলের আয়-ব্যয়ের অনিয়মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।

সেই সঙ্গে শ্যামল কান্তি ভক্তকে চাকরিচ্যুত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিবকে নির্দেশ দেন এমপি। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে স্কুলের আয়ব্যয়ের হিসাব বুঝে নেয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিনকে নির্দেশ দেন।

সেলিম ওসমান বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, আজকে আপনারা যে কাজটি করেছেন সচেতন নাগরিক হিসেবে এটাই আপনাদের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, আয়ব্যয়ের হিসাবে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিচার করা হবে।

এসময় জনতা সন্তোষ প্রকাশ করে এমপির নামে স্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে থানায় নিয়ে যায়।

মন্তব্য