জাবিতে ৫১ কোটি টাকার অডিট আপত্তি, নেই কোনো ব্যবস্থা

2015_10_17_20_10_25_fYCeFDjAeh0w5oiRrfVMeeOxB3ZWQV_original

ঢাকা : দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অডিট আপত্তির পরিমান দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আর্থিক বিধি ও সরকারি নীতিমালা যথাযথভাবে না মেনে আর্থিকখাত পরিচালনা করায় বর্তমানে জাবির অডিট আপত্তির পরিমান দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

তবে ২০০৯ থেকে ২০১২ অর্থবছর পর্যন্ত এ আপত্তির পরিমান ছিল ২৬ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ। এভাবে অডিট আপত্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার করণে ঘাটতি বাজেটের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পড়ছে প্রচণ্ড চাপের মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অর্থবছরে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক শাখায় আয়-ব্যয় ও প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহারের হিসাব নিরীক্ষা করে মোট ৬৬৫টি নিরীক্ষা আপত্তি দেয় স্থানীয় সরকার ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর। এতে অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তির পরিমান ৫১ কোটি ৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় পৌঁছে। তবে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অডিট আপত্তি নেই।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের সময়ে মোট ১৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত উপাচার্য মুহাম্মদ এনামুল হকের সময়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর ৮ বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৭২ হাজার টাকা, ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম কামাল উদ্দিনের সময়ে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সালে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ আহমেদের সময় ২ কোটি ২৩ লাখ ৬৬ হাজার, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেনের সময় ৩১ লাখ ৫৩ হাজার টাকার অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়।

এছাড়াও ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সালে উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর চার বছরে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সালে উপাচার্য অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদের আমলে ৩৬ লাখ ৬ হাজার, ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সালে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল বায়েসের দুই বছরে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার, ২০০১ থেকে ২০০৪ সালে উপাচার্য অধ্যাপক জসীম উদ্দিন আহমেদের সময় ১ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা নিরীক্ষা আপত্তি ওঠে।

তবে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানের আমল এবং ২০০৮ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান উপাচার্য থাকাকালীন কোনো অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়নি।

২০০৯ থেকে ২০১২ উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের তিন বছরে মোট ২৬ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার, ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে ৭ কোটি  ৪ লাখ ২৬ হাজার, তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নিরীক্ষা হয়নি বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান লঙ্গন করে অর্থ ব্যয়, বিভিন্ন ব্যক্তি, সমিতি ও ইউনিয়নের অযৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে অর্থ ব্যয়ের কারণে অডিট আপত্তির পরিমান দিন দিন বাড়ছে।

এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপাক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) কঠোরভাবে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তারা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের বাংলামেইলকে বলেন, অডিট আপত্তির বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে এবং অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, আমাদের অডিট আপত্তি আছে। তবে কী পরিমাণ আছে তা ভালো করে না জেনে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।

মন্তব্য