পিইসি বন্ধ হলে অন্ধকারে হাতড়াতে হবে
২০১৬ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন অভিভাবকরা। শিক্ষাবিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন পিইসি অপ্রয়োজনীয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে পিইসি বন্ধের প্রস্তাবনা মন্ত্রিসভায় পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে। তবে সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলছেন, ‘এ মুহূর্তে পিইসি পরীক্ষা বন্ধ হলে অন্ধকারে হাতড়াতে হবে।’ পিইসি পরীক্ষার ভালোমন্দ নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক শিক্ষা সচিব।
এবছর থেকে পিইসি বাতিলের দাবি তুলেছেন অভিভাবক, শিক্ষাবিদরা। মন্ত্রণালয়ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সে অনুযায়ী এগোচ্ছে। পিইসি পরীক্ষার আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল কি?
আগে আমাদের জানতে হবে পিইসি কেনো এবং কোন পরিস্থিতিতে চালু করা হয়েছিল। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা চালু করার আগে আমরা বুঝতাম না যে, কোন স্কুল কী অবস্থায় আছে, কী ধরনের পড়াশোনা হচ্ছে। কেমন তাদের অর্জন। এসব জানারও উপায় ছিল না। এখন আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি।
শিক্ষার্থীদের সার্বিক পরিস্থিতি জানার দুটি উপায় আছে: এক. যেভাবে সমপানী পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে এ প্রক্রিয়া অব্যহত রাখা। সমাপনী পরীক্ষ নেয়ার আগে সবাই বলতো আমার স্কুল খুব ভালো। কিন্তু পরীক্ষা নেয়ার পরে দেখলাম ৮শ’র বেশি স্কুলে কেউ পাস করেনি। একজনও না। পিইসিকে পরীক্ষা বলা ঠিক হবে না। এটা মূল্যায়নের পদ্ধতি।
দুই. অপরপক্ষে সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হচ্ছে ক্লাসভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা, যা উন্নত দেশগুলোতে চালু আছে। সেখানে প্রতিদিন মূল্যায়ন করা হয়। এটি আদর্শ ব্যবস্থা। বুঝা যায়, কোথায় গুরুত্ব দিতে হবে। সেটি হচ্ছে আইডিয়াল বা আদর্শ সিস্টেম। সেটি হওয়া উচিৎ।
প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে। এখন এক প্রাথমিকে দুই সমপানী কীভাবে?
পঞ্চম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত পিইসি পরীক্ষা বন্ধ করে দিলে, আমাদের অবস্থা হবে অন্ধকারে হাতড়ানোর মতো। আমরা বুঝতে পারবো না, কোথায় কী হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণিতে যদি পরীক্ষা হয়, …৮ বছর পর পরীক্ষা। এতো দিন পর বুঝতে পারবো কোথায় কী পরিস্থিতি। তখন ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ আমাদের থাকবে না।
এজন্য আমি খুব জোর দিয়ে পরামর্শ দিচ্ছি- বর্তমান পরিস্থিতিতে পিইসি তুলে দেয়া সঠিক হবে না। যতোক্ষণ না ক্লাস বেইজড অ্যাসেসম্যান্ট করতে না পারবো। আমার মনে হয় এখন থেকে ক্লাস বেইজড অ্যাসেসমেন্ট শুরু করা উচিৎ। প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী যদি ভালো ফল করে, ভালো শেখে, বেশি শেখে, তাহলে আমাদের উপকার হবে।
অনেকে বলছেন পিইসি পরীক্ষা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে। যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। শিক্ষার্থীদের সুস্থ বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার অর্থ কী?
পরীক্ষা উঠিয়ে দিলে বাচ্চাদের ওপরে চাপ কমবে! আমি মনে করি এটা ঠিক না। আপনি কীভাবে পড়াচ্ছেন তার ওপর চাপ নির্ভর করে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ পড়ানো হয়, অন্য অনেক উন্নত দেশের চেয়ে অনেক কম। জাপান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, যেগুলোকে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে বলি- এসব দেশে আমাদের দেশের বাচ্চাদের চেয়ে বেশি পড়ানো হয়। পড়ার জন্য চাপ দেয়া হয়।
পিইসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট কোনো কাজেই আসে না। তাহলে শুধু শুধু এতো বড় একটি পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের চাপিয়ে দেয়া কেনো?
পরীক্ষা বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তখন সে একটা কিছু অর্জন করে। যেমন একটি কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করলে একটি পুরস্কার যদি পায়, তাহলে অর্জন নিয়ে গর্ববোধ করে। সার্টিফিকিটটা পেয়েও কিন্তু শিক্ষার্থী গর্ববোধ করে।
অভিভাবকরা বলছেন, পিইসি পরীক্ষার কারণে কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এখন সরকার যেহেতু কোচিং বাণিজ্যকে অবৈধ করেছে, সেক্ষত্রে পিইসি বন্ধ করা ছাড়া কোচিং বাণিজ্য কীভাবে বন্ধ করা সম্ভব?
পিইসি পরীক্ষার কারণে কোচিং বাণিজ্য হচ্ছে এটা অযৌক্তিক একটা কথা। যদি তাই হয় তাহলে ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণিতে কেনো কোচিং করানো হচ্ছে। সেখানে তো কোনো বোর্ড পরীক্ষা বা পাবলিক পরীক্ষা নেই। প্রথম শ্রেণি থেকে বাচ্চাদের কোচিংয়ে পাঠানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পিইসি তুলে দিলেই কোচিং বন্ধ হয়ে যাবে এ গ্যারান্টি কে দিতে পারবে? এটা নির্ভর করে মা-বাবাদের ওপর। তাদের বিশ্বাসের ওপর। অনেক সময় আমরা দেখেছি যে কোচিং সেন্টারগুলোতে প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। যেটা স্কুলে আছে। তা সত্ত্বেও মা-বাবার বিশ্বাস পূরণের জন্য তারা এ কোচিং সেন্টারে পাঠায়।
কোচিংয়ের শিক্ষকরা দক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও কেনো অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন?
কাওরান বাজারে আমি দেখেছিলাম জোঁকের তেল বিক্রি করে। এ তেল দিয়ে কোনো কাজ হয় না। তারপরও মানুষ কিনছে। এটা মানুষের বিশ্বাস। চিন্তা এবং বাস্তবতার মধ্যেকার পার্থক্য ঘুচানোর জন্য মানুষ এসব করে। যখন মানুষভাবে তার আরো চাই। তখন তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। যা পায় তাই ধরতে চায়। ভালো হোক মন্দ হোক।
এমন কি সম্ভব যে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কোচিং সেন্টার পাঠাবে না?
অভিভাবক শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টার বিমুখ করতে চাইলে আমাদের স্কুলগুলোকে উন্নত যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ করতে হবে। আইটি বেইজড, মাল্টমিডিয়া যোগ করতে হবে। অল্প সময়ে যতো বেশি শেখানো যায়। ক্রস কারিকুলার ডেলিভারি কীভাবে করতে হয়। ক্রস ডিসিপ্লিনারি ডেলিভারি কীভাবে করতে হয়। সেগুলো শেখানো যেতে পারে। সেজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পড়ানো হয় না। শিক্ষাবিদরাও বিভিন্ন সময় বলেন পড়াশোনা ক্লাসমুখি হওয়া উচিৎ। এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী?
ক্লাসে পড়ানো হয় না- বিষয়টি সবক্ষেত্রে ঠিক না। অফিসে সবাই সময় মতো উপস্থিত হয় না। বাংলাদেশের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের একই অবস্থা। আপনি আমেরিকাতে গিয়ে দেখেন। তারা বলবে গভর্নমেণ্ট খুব স্লো। আমি এক জায়গায় ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলাম। যেখানে সিভিলিয়ান আর ব্রিটিশ আর্মিদের সম্পর্কের ওপর ট্রেনিং ছিল। আমি আর্মিদের জিজ্ঞেস করেছিলাম- আমাদের দেশের মানুষকে আর্মিরা মনে করে স্লো, করাপ্ট, সিভিলিয়ানরা আর্মিদের মনে করে লেস এডুকেডেট, তোমাদের এখানে কী? আমাকে বললো বিষয়টি আছে- ‘তবে প্রকট না।’ যখন বুঝাপড়া হয় এডুকেটেড হয় তখন কিন্তু গায়ে পড়ে ঝগড়া করে না। সোসাইটি অনুযায়ী পার্থক্য থাকে। শ্রেণি অনুযায়ী একটা ভেদাভেদ থাকবেই। এক কেজি বেগুণ কিনলেন। একটা বেগুণে পোকা পাইলেন। হইছে! ব্যাটা ফাঁকিবাজ। আসলে ব্যাপারটা তা নাও হতে পারে। সবাই একইরকম না। হতেও পারে না। সবকিছু ওই সেন্স থেকে চিন্তা করতে হবে।
পিইসি পরীক্ষা তুলে দিলে শ্রেণি কক্ষে পড়াশোনা আরো কমে যাবে। এখন তো বলা হচ্ছে ক্লাসে পড়ানো হয় না। তখন দায়বদ্ধতা আরো থাকবে না। এখন তো জবাবদিহি করা লাগছে। তখন এ জায়গাটিও থাকবে না। যখন পিইসি তুলে দেয়া হবে তখন তো কেউ টের পাবে না। কি পড়াচ্ছে না পড়াচ্ছে। কী ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পিইসি পরীক্ষা সরকার চালু করেছে। প্রয়োজনিয়তা থাকা সত্ত্বেও বাতিল করার চিন্তা কি সরকারের ব্যর্থতার পর্যায়ে পড়ে না?
পিইসি তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে গ্রহণ করেছে এটাকে আমি সরকারের ব্যর্থতা বলবো না। অনেক সময় বুদ্ধিজীবীরাও আমাকে গালিগালাজ করে। আমার সময় অনেক চিন্তাভাবনা করে পিইসি পরীক্ষার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। ঘরে-বাইরে দুই জায়গায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। আমার ধারণা সরকারের ওপর জনপ্রিয়তার একটা চাপ আছে।
আমাদের শিক্ষাবিদরা, নামি-দামি লোকেরা যখন বলেছে সাধারণ মানুষ তাতে প্রভাবিত হয়েছে। এর ফলে সরকারের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়েছে। এখন সরকার মনে করছে জনগণ চাচ্ছে না। তারা পছন্দ করছে না। খামাখা একটা হাঙামার ভিতরে পড়ার কি দরকার! এটা করলে জনপ্রিয়তা হারাবে। তবে পাবলিক মতামত সব সময় সঠিক হয় না। এটা আমার একান্ত নিজস্ব ধারণা।
শিক্ষার সঙ্গে বাজারের কোনো যোগ আছে কি না?
আমাদের মানুষ মনে শিক্ষা এটা কমোডিটিজ (পণ্য) নয় এটা প্রিভিলেজ (বিশেষ সুযোগ)। শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে চিন্তা করতে হবে। কারণ শিক্ষা অর্জনের জন্য টাকা খরচ করতে হয়। এটা অর্জন করার পরে আয় করা যায়। যে টাকা শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলো সারাজীবনে, প্রত্যেক মাসে যদি শিক্ষার পিছনে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে, পড়াশোনা শেষ করে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করতে না পারলে এ শিক্ষা দিয়ে আমরা বেশি দূর এগোতে পারবো না। বিশেষ সুযোগ মনে করা হলে হয়ত সৎ,দক্ষ, নীতিবান হওয়া যাবে। কিন্তু কিছু দিন পরে সে দক্ষতা, সততা, নীতিবান মনোভাব আর থাকবে না। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
শিক্ষার গুণগতমান কমে যাওয়ার কারণ কী?
শিক্ষার গুণগত মান নির্ভর করে আপনি এর পিছনে কতো টাকা খরচ করছেন। কতো দিন যাবৎ খরচ করছেন। ফুটপাত থেকে জিনিস কিনে ব্র্যান্ডের কোয়ালিটি পাওয়া যাবে না। এখন ছেলে-মেয়েরা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শিখছে। যারা বলছে কোয়ালিটি খারাপ হচ্ছে, আমি বিশ্বাস করি না। আগে কয়টা লোক সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারতো? এখন অনেক লোকে অসম্ভব সুন্দর বলে। এখন কতো লোকে পড়াশোনা করে? সংখ্যা অনেক বেশি। একটি বিষয়ে তাদের (সমালোচকদের) সঙ্গে আমি একমত, আমাদের শিক্ষারমান যে পর্যায়ে যাওয়ার কথা ছিল সে, পর্যায়ে আমরা পৌঁছাতে পারিনি। এ বিষয়ে আমি একমত।
যারা বলছেন শিক্ষার গুণগতমান ভালো না। এখন যদি সরকার শিক্ষায় ৫ গুণ টাকা বাড়িয়ে দেয় তাহলে কি রাতারাতি শিক্ষার মান বাড়বে? কেনো বাড়বে না? শিক্ষকের দক্ষতা রাতারাতি ৫গুণ করা সম্ভব না। তার কারণ কোয়ালিটি অব অ্যাডুকেশন কেন নট সারফাস কোয়ালিটি অব টিচার। কোয়ালিটি টিচার ছাড়া কোয়ালিটি অ্যাডুকেশন সম্ভব না। কোয়ালিটি খারাপ, এ জন্য শিক্ষকদের গালিগালাজ করবো?
শিক্ষক সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব?
স্কুলের শিক্ষক কারা হতে চায়? যিনি বিসিএস পাস করেছেন তিনি তো স্কুলের শিক্ষক হবেন না। এটা একটা বিষয়। তারপর যারা শিক্ষক আসছেন, আমরা যারা আসছি- ভিন্ন জগত থেকে কেউ আসেননি। সবাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসছে। এখন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষারমান না বাড়াই, তাহলে হবে না। যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তারা কি পশ্চিমা দেশের মতো সবচেয়ে ভালোমানের? নিশ্চয় না। তাহলে কীভাবে সম্ভব?
বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা তারা বলছে, আমাদের মেটারিয়ালস সব স্কুল থেকে আসছে। তারা দোষ দিচ্ছে স্কুলকে। স্কুল দোষ দিচ্ছে প্রাইমারি স্কুলকে। প্রাইমারি স্কুল দোষ দিচ্ছে অমুকের ছেলে কীভাবে ভালো করবে। বাপ রিকশাওয়ালা, মজুর, ক্ষেতে কাজ করে। ভালো করে পড়ায় না। ও কীভাবে ভালো করবে? তবে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজে দেয়া কঠিন। ব্যাপারগুলো অবিরাম প্রচেষ্টার বিষয়।
সর্বোচ্চ ফলাফল পেয়েও শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে খাতা মূল্যায়নে অতিরিক্ত নম্বর দেয়াকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে। এভাবে কী শিক্ষার্থীরা অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছে না?
এ প্লাস পেয়ে সার্বিক বিষয়ে তার প্রমাণ রাখতে হবে ব্যাপারটা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ না। নম্বর সবাইকে দেয়া হয়। সবার সাথে সবার প্রতিযোগিতা হয়। একসময় নম্বর দিতে কিপটামি করা হতো। ১০০-এর মধ্যে ৩৩ পেয়ে পাস করলো। তখন এ সর্বনিম্ন নম্বরে পাস করার কারণে তার মনের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা কাজ করে। সে মনে করে আমি তো কোনোরকম টেনেটুনে পাস করেছি। আমাদের এখানে অনেকে বলে যারা আগে ছোট চাকরি করেছে। তারপর বিসিএস দিয়ে পাস করেছে। আগে ছোট চাকরি করার কারণে তাদের চিন্তাভাবনাও ছোটই থেকে গেছে। কর্মক্ষেত্রে তারা ততো ভালো করতে পারে না। শুরুতেই ধাক্কা খেলে পরবর্তীতে নিজেকে মেলে ধরতে সমস্যা হয়। প্রথমেই ভালো সুযোগ দিতে পারলে নিজেকে মেলে ধরতে সহজ হয়। আমার মনে হয় এটা খারাপ না। এটা খারাপ কিছু না।
প্রশ্ন ফাঁস নিয়মিত একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফাঁস রোধে কেনো কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
প্রশ্নপত্র ফাঁস কত শতাংশ হচ্ছে এটা বড় কথা। এতো বড় দেশ অনেক শিক্ষার্থী। অনেক মানুষ জড়িত এর সাথে। কী পরিমাণ হচ্ছে এটাই পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এবং যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না। তাদেরকে সিস্টেমের মধ্যে আনা হচ্ছে কি না এটা বড় কথা। অমেরিকায় এতো সিকিউরিটি সিস্টেম তারপরও প্রতিদিন সেখানে মরছে। বিষয়টি হচ্ছে জাস্টিস আছে কি না। কেয়ার আছে কি না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এক্সাম মেনেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব। প্রক্রিয়াটাও খুবই সহজ। প্রক্রিয়াটি হলো-এখন এমন কয়েকশ লোকে প্রশ্ন দেখতে পারে। মুখস্ত করে এসে বাইরে বলে। এক্সাম মেনেজমেন্ট সিস্টেম যখন হবে তাতে একটি কোয়েশ্চন ব্যাংক থাকবে। কেউ টের পাবে না কোথা থেকে প্রশ্ন আসছে। এখানে কয়েকশ কোটি প্রশ্ন থাকবে। ইলেক্ট্রনিকে সেটা সর্ট হবে। ইলেক্ট্রনিকে সেখানে প্রশ্ন হবে। প্রশ্নের লেখা দেখা যাবে না। এনক্রিপশনে (গোপন কোড) লেখা থাকবে। যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তারা বুঝতে পারবে না কি হচ্ছে।
স্কুলে যেখানে পরীক্ষা হবে সেখানে আইপি প্রিন্টার থাকবে। সেখান থেকে প্রিন্ট হয়ে পরীক্ষার হলে চলে যাবে। সে পদ্ধতিতে আরো প্রক্রিয়া আছে। এগুলো মেইনটেন করলে প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব। সে দিকে আমাদের যেতে হবে।
পরীক্ষার হলের পরিদর্শক বা শিক্ষক যারা থাকেন তারাই নকলে সহয়োগিতা করেন। এটা কীভাবে রোধ করা যাবে?
প্রশ্ন সেট করার দুর্বলতার কারণে এটা হয়ে থাকে। যদি ৩০টি প্রশ্ন করে ৩০ মিনিট সময় বেঁধে দেয়া হয় তখন সে যার সাথে কথা বলবে তারও সময় নষ্ট হবে। শিক্ষকও যদি বলে দেয় তাতে মনযোগ দিতে সময় লাগবে। একটা স্টাডি আছে, মনোযোগ নষ্ট হলে পূর্বের মনযোগে ফিরতে ২০ সময় নষ্ট হয়। এতো সময় তো সে পাচ্ছে না।