মেট্রোরেলের কর্মযজ্ঞ উদ্বোধন

2016_06_26_13_03_37_3TzztEPITIBlDJakZaWhDFch0qQGcj_original (1)

ঢাকা : রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথ দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দিতে উদ্বোধন করা হয়েছে বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেলের কর্মযজ্ঞ। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের মেগা এ প্রকল্প শেষ হলে দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দেয়া যাবে মাত্র ৩৮ মিনিটে। ঘণ্টায় দু’দিক থেকে আসা-যাওয়া করতে পারবে ৬০ হাজার যাত্রী।

রোববার (২৬ জুন) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

একই অনুষ্ঠানে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের আওতায় গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যারপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) জন্য গাজীপুরে বাস ডিপো নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন তিনি। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট সড়কে ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।

উদ্বোধন শেষে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মেট্রোরেল প্রকল্প। মেগা এ প্রকল্পের পাশাপাশি ঢাকার মহানগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক ও সহজ করতে কাজ করছে সরকার।

তিনি জানান, ঢাকার চারদিকে বৃত্তাকার সড়ক-নৌ ও রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নগরীর অভ্যন্তরে যোগাযোগব্যবস্থা দ্রুততর করতে ফ্লাইওভারসহ বেশকিছু যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে, যা বাস্তবায়িত হলে মহানগরীতে চলাচলে কষ্ট লাঘব হবে যাত্রীদের।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রকল্পটি ফার্মগেট পর্যন্ত সম্প্রসারণের অনুরোধ জানান। বলেন, এতে নগরবাসীর কষ্ট অনেক লাগব হবে।

মেগা এ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ঢাকার মানুষ যেন আধুনিক এ যোগাযোগের সুবিধা দ্রুত পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এ মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এটি উত্তরা থেকে শুরু হয়ে পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি-ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ- টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত যাবে।

মেট্রোরেল চালু হলে ঘণ্টায় উভয়দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আর বাস্তবায়নাধীন বিআরটিএ লাইন দিয়ে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট সড়কে ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।

২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। পরে ভূমি অধিগ্রহণের বিশেষ বিধান রেখে মেট্রোরেল সংক্রান্ত আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপানের আন্তার্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার। ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাইকার সঙ্গে চুক্তি সই করেছে সরকার।

পরিকল্পনার নকশা অনুযায়ী রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে উত্তরা থেকে শুরু করে মিরপুর-ফার্মগেইট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত এই রেল প্রতি চার মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ছুটে চলবে। আর এতে ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী।

মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেইট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়।

মন্তব্য