‘মানুষ খুনে অনুশোচনায়’ তিন হিযবুত কর্মীর আত্মসমর্পণ

jessore_hizbut_123519

ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে মানুষ হত্যার ঘটনায় অনুশোচনা থেকে তিন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুপুরে যশোর পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের দপ্তরে গিয়ে তারা ধরা দেয় বলে জানিয়েছে বাহিনীটি। এরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য ছিলেন।

আত্মসমর্পণকারী তিন জন হলেন: ইয়াসির সজল, রাহান আহমেদ এবং মেহেদী হাসান পাশা। এদের মধ্যে সাদ্দাম ছিলেন প্রাণ আরএফএল গ্রুপের বগুড়া অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক। তিনি হিযবুত তাহরীরের মোশরেফ নামে সাংগঠনিক পদে ছিলেন। আর রাহান যশোর পলিটেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী। আর সাবাব যশোর ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে পড়েন। সংগঠনে এদের পদ সাবাব।

পুলিশ জানায়, সাবাব হিযবুত তাহরীরের প্রাথমিক পর্যায়ের পদ। আর তাদের ওপরের পদ হলো মোশরেফ। এরা সবাই অনলাইনে হিযবুত তাহরীরের পক্ষে প্রচার চালাতেন।

গত ১৮ জুলাই র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জঙ্গিবাদ ছাড়লে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণার পর এই প্রথম কেউ আত্মসমর্পণ করলো। তবে পুলিশের কাছে তিন জন ধরা দিলেও র‌্যাবের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি বলে বানিয়েছেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান।

‘তিন হিযবুত কর্মীর বোধদয়’

যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে মানুষ হত্যা দেখে এই তিন জনের বোধদয় হয়েছে এবং এ কারণে তারা পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে।’ এ সময় তিন জনের অভিভাবকও উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় আবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহারুল ইসলাম এই আত্মসমর্পণে মধ্যস্ততা করেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এরা নানাভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে গিয়েছিল। পরে তারা ভুল বুঝতে পারে এবং বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে আমি তাদেরকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাই।’

পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে ফেসবুক প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা হিযবুত তাহরীরের প্রতি আগ্রহী হয়। পরে অনলাইন প্রচারণায় যোগ দেন তারাও। এই তিন জনের মধ্যে রায়হানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে যশোর সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা আছে বলে জানিয়েছেন যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়ামুল হক। অন্য দুই জনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, শুক্রবার তিন জনকেই আদালতে তোলা হবে।

উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হলেও তারা গোপন তৎপরতা চালু রাখে। সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন হিযবুত তাহরীরের সদস্য ছিলেন বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম এই সংগঠনের কর্মী ছিলেন। এই হামলার পর আরও হামলার হুমকি দিয়ে ভিডিও বার্তা প্রকাশকারী তাহমিদ রহমান শাফিও হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। আবার মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যা চেষ্টার সময় হাতেনাতে আটক গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমও হিযবুত তাহরীরের সদস্য ছিলেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, সংগঠনের বড় ভাইদের নির্দেশেই শিক্ষক রিপনকে খুন করতে গিয়েছিলেন তারা।

পুলিশ বলছে, জঙ্গি হামলায় মানুষ হত্যার ঘটনায় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে আত্মসমর্পণকারী তিন জন। তারা সবাই সব ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়।

এই তিন জনের আত্মসমর্পণের পর দুপুরে যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশের খুলনা অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক এস এম মনির-উজ-জামান। তিনি বলেন, ‘হিযবুত তাহরীরের ওই তিন সদস্য তাদের ভুল বুঝতে পেরে আইনি সহায়তা চেয়েছে।

কী ধরনের সহায়তা দেয়া হবে জানতে চাইলে মনির-উজ-জামান বলেন, তাদেরকে একটি প্রক্রিয়ায় ভুল বুঝিয়ে ধ্বংসাত্মক পথে নেয়া হয়েছে। আমরা কাউন্সেলিং করে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করবো।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা টেলিফোনে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একদিকে পুলিশের অভিযান, অন্যদিকে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণপ্রতিরোধ, পাশাপাশি জঙ্গিদের নৃশংসতা দেখে জন্ম হওয়া অনুশোচনা-সব মিলিয়ে তিন জন আত্মসমর্পণে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।’ মনির -উজ-জামান বলেন, ‘তারা কেউ বেঘোরে প্রাণ দিতে চায় না। তারা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে, এই বিষয়টা এখন তারা বুঝতে পেরেছে।’

এই তিন জনের মত আর কেউ আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে তাহলে তাদেরকেও সহায়তা দেয়ার কথা জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মন্তব্য