ঢাকার পান্থপথে আবাসিক হোটেলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যদের অভিযানে জেএমবির সন্দেহভাজন এক জঙ্গি নিহত হয়েছেন।

এক জঙ্গির অবস্থানের খবরে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে ওলিও ইন্টারন্যাশনাল নামের হোটেল ভবন মঙ্গলবার ভোরে ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকার প্রতিটি গলি এবং বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন, সোয়াট সদস্যরা অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পান্থপথের যে জায়গায় চারতলা ওই হোটেল ভবনের অবস্থান, সেখান থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবনের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার।

১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল পান্থপথের অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন এক জঙ্গির অবস্থানের তথ্য পেয়ে সোয়াটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযান শুরু করে। সেখানে ‘নাশকতার সরঞ্জাম’ থাকতে পারে বলেও তাদের কাছে খবর আছে। পুলিশ কয়েক ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে চারতলা হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।

চতুর্থ তলার ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একজনের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে। পরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম  জানান, হোটেলের যে কক্ষে বিক্ষোরণ ঘটেছে, আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবক সোমবার রাতে সেটি ভাড়া নেয়। “হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্য অনুযায়ী ওই যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম, বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়।

“সে নব্য জেএমবির সদস্য; আগে শিবির করত। তার বাবা আবুল খায়ের মোল্লাও খুলনার জামাত নেতা।” পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নিহত যুবক নব্য জেএমবির সদস্য। গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার তথ্য পায়। “হোটেলে অনুসন্ধান চালানোর সময় তার কক্ষ থেকে আমরা কোনো সাড়া পাইনি। তাকে সারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু সে করেনি। সে প্রথমে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। অভিযান শুরু হলে সে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়।”

সকালে পুলিশ হোটেলটি ঘিরে ফেলার পরপরই রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথ-গ্রিন রোড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আশপাশের প্রতিটি গলিতে অবস্থান নেন পুলিশ ও সোয়াট সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও এনে রাখা হয়।

ছুটির দিনে  রাস্তার এই অবস্থা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয় উদ্বেগ। যান চলাচল বন্ধ থাকায় স্কয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে আসা অসুস্থ ব্যক্তিদের পুলিশের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।  আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে বিকট বিস্ফোরণের সঙ্গে হোটেল ভবনের চতুর্থ তলার দেয়াল ও গ্রিল ভেঙে নিচে পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয় ।  এর পরপরই সামনের রাস্তা দিয়ে আহত অবস্থায় একজনকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহার হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে যাচ্ছিলেন। বিস্ফোরণের ফলে ইটের টুকরো ছিটকে গিয়ে তার মাথায় লাগে।

মন্তব্য