অ্যাত ল্যাহাপড়া কইরা মানুষ জংলি হয় ক্যামনে!

2016_07_26_21_12_49_rEYlTXH2vxfsmUbt1PpDDHz4jFLpR1_original

ঢাকা: রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের তাজ মঞ্জিলের (৫৩ নম্বর বাসা) পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ছিল ব্যাচেলরদের মেস। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীসহ কোচিং করতে আসা শিক্ষার্থীরা থাকতো এখানে। চার-পাঁচ বছর আগে এই ভবনের মেস বাসায় বুয়ার কাজ করতেন আতিমন বেগম। আতিমন বেগম কখনো ভাবতে পারেনি এখানে জঙ্গিরা আস্তানা গাড়তে পারে।

আতিমন বাংলামেইলকে বলেন, ‘চাইর-পাঁচ বছর আগে জাহাজ বিল্ডিং-অ (তাজ মঞ্জিল) বুয়ার কাম করতাম। পাঁচ নম্বর রুডের (রোডের) মেলা বাসায় কাম করছি। জাহাজ বিল্ডিং-অ ছাত্ররাই বেশি থাকতো। অন্ধকার ঘুটগুইট্টা বাসা, এই কারণে ফেমিলি থাকতো কম। বগুড়া, রংপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইলের ছাত্ররা থাকতো। কোনোদিন মনে হয় নাই এখানে জংলি (জঙ্গি) থাকবার পায়।’

জঙ্গিবাদ কিংবা জঙ্গি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান নেই আতিমন বেগমের। জঙ্গি শব্দটি ঠিকমত উচ্চারণও করতে পারেন না। চারপাশের মানুষের মুখে শুনে শুনে তিনি এতটুকু বুঝে গেছেন, জঙ্গিরা যে কর্মকাণ্ড করে সেটা গর্হিত, অন্যায়, অপরাধ।’

আতিমনের ভাষ্য মতে, ‘অ্যাত ল্যাহাপড়া কইরা মানুষ জংলি (জঙ্গি) হয় কেমনে! হুনছি জংলিরা মানুষ মাইরা ফালায়।’

কল্যাণপুর গার্লস স্কুলের পেছনের তিন নম্বর বস্তিতে থাকেন আতিমন বেগম। সোমবার দিবাগত রাতে জঙ্গি দমনে পুলিশের অভিযান সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তিনি। নফল রোজা রাখবেন বলে ভোরে সেহরি করতে ওঠেন। তখনই আশপাশে কোথাও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। কিছু বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। বৃষ্টির জন্য বাইরেও আসতে পারেননি। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহীনির অভিযান শেষ হবার পর লোকমুখে জানতে পারেন ভয়াবহ এই পরিস্থিতির কথা।

ছয় বছর আগে স্বামী মারা গেছে আতিমনের। দুই মেয়ে ও দুই ছেলে তার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে পড়ে নবম শ্রেণিতে, ছোট ছেলে পড়ে মাদরাসায়। ছেলেদের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় দানা বাঁধছে তার।

কোনো রকম ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই সহজ বাক্যে বলতে থাকলেন, ‘আমার পোলাগুলার অহন কি অইবো। দেশের মধ্যে বলে জংলি বাড়াইছে (বের হয়েছে)। অগো যদি নিয়া যায়গা! তাইলে তো পুলিশে মাইরা ফালাইবো। আমার রহিম-রায়হানের কী হইবো…?’

মন্তব্য